অনলাইন ডেস্ক
ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন কুসংস্কারের প্রকোপ এই একুশ শতকে এসেও ব্যাপক। তারই একটা প্রমাণ যেন ভারতের উত্তরাখণ্ড রাজ্যের হরিদ্বারে ঘটে যাওয়া এক মর্মান্তিক ঘটনা। ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত ৫ বছরের এক শিশুর রোগমুক্তি ও দীর্ঘায়ুর আশায় তাকে তীব্র হাড় কাঁপানো শীতেও গঙ্গার পানিতে চুবিয়েছে তার বাবা ও আত্মীয়রা। এর ফলে, যা হওয়ার তাই হয়েছে।
হরিদ্বার পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উত্তর ভারতে চলমান তীব্র শীতের মধ্যেও পাঁচ বছরের ওই শিশুকে গঙ্গার পানিতে চুবিয়েছিল তার বাবা। দীর্ঘায়ুর আশায় তাঁরা কুসংস্কারের বশবর্তী হয়ে পানিতে ডুবানোর ফলে শেষ পর্যন্ত শিশুটি মারাই গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, গতকাল বুধবার দিল্লিতে বসবাস করা ওই শিশুকে নিয়ে হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে রওনা হয় তার বাবা ও অপর এক নারী আত্মীয়। স্থানীয় কয়েকটি গণমাধ্যম জানিয়েছে, ওই নারী শিশুটির ফুপি। তাদের বহনকারী ট্যাক্সিক্যাবের চালকও যাত্রীদের কথোপকথনের বরাত দিয়ে বিষয়টি জানিয়েছেন।
ট্যাক্সিচালক আরও জানান, তিনি শিশুটিকে দেখেই বুঝতে পারেন সে খুবই অসুস্থ। শিশুটির বাবা তাঁকে জানিয়েছিল যে, সে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছে এবং দিল্লির চিকিৎসকেরা তার বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিও থেকে দেখা গেছে, শিশুটির ফুপি যখন শিশুটিতে গঙ্গার তীব্র ঠান্ডা পানিতে শিশুটিকে বারবার ডুবাচ্ছিল তখন তাঁর বাবা বিড়বিড় করে মন্ত্র আওড়াচ্ছিল।
স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, একপর্যায়ে শিশুটিকে দীর্ঘ সময়ের জন্য পানিতে ডুবিয়ে রাখা হয়। উপস্থিতরা শিশুটিকে পানি থেকে তুলে আনতে বললেও শিশুটির আত্মীয়রা তাতে কর্ণপাত করেনি। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে জোর করে তুলে আনে। এতে শিশুটির ফুপি ক্ষিপ্ত হয়ে স্থানীয়দের ওপর চড়াও হওয়া চেষ্টা করে। পরে স্থানীয়রা শিশুটিকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে।
অপর এক ভিডিওতে দেখা যায়, নদীর ঘাটের একটি অংশে শিশুটি শুয়ে শুয়ে কাঁপছে এবং পাশে বসে তার ফুপি বলছে, তিনি নিশ্চিত যে, তার ভাতিজা আবার জীবিত হয়ে উঠবে।
হরিদ্বার পুলিশের প্রধান স্বতন্ত্র কুমার জানান, শিশুটির পরিবার তার ব্লাড ক্যানসারের বিষয়টি তাঁকে জানিয়েছে। তাঁরা জানিয়েছে, দিল্লির চিকিৎসকেরা তাঁর বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়েছে এবং বলেছে, শিশুটিকে বাঁচানো সম্ভব নয়। শিশুটির পরিবারে বিশ্বাস ছিল, তাদের সন্তানকে গঙ্গার জলে ডোবালেই সে আবার সুস্থ হয়ে উঠবে।
স্বতন্ত্র কুমার বলেছেন, ‘আমরা দিল্লির হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট পেয়ে জেনেছি বিষয়টার সত্যতা আছে। কিন্তু এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে, তাদের বিশ্বাস ছিল যে, গঙ্গাস্নান তাদের শিশুকে সুস্থ করে তুলবে এবং এ কারণেই তারা তাকে এখানে এনেছিল। ছেলেটির বাবা-মা এবং তার ফুপিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।