অনলাইন ডেস্ক
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দুটি নাট্যোৎসব থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে তসলিমা নাসরিনের উপন্যাস ‘লজ্জা’র মঞ্চায়ন। বাংলাদেশ থেকে নির্বাসিত এই লেখক এ ঘটনার পর পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরুদ্ধে শিল্পী ও লেখকদের কণ্ঠরোধের অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তাঁর উপন্যাস ‘লজ্জা’র নাট্যরূপের মঞ্চায়ন দুটি নাট্যোৎসবে বাধ্য হয়ে বাতিল করেছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তসলিমা নাসরিন অভিযোগ করেছেন, উত্তর ২৪-পরগনার গোবরডাঙ্গা নাট্যোৎসব এবং হুগলির পান্ডুয়া নাট্যোৎসবে পুলিশ হস্তক্ষেপ করেছে এবং আয়োজকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে নাটকটি তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার জন্য। পুলিশ দাবি করেছে, নাটকটি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা উসকে দিতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করা এক পোস্টে তসলিমা নাসরিন গতকাল সোমবার বলেন, ‘নাটকটির সময়সূচি দুই মাস আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই পুলিশ আয়োজকদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ‘লজ্জা’ নাটকটি তালিকা থেকে বাদ দিতে। আমি মনে করিয়ে দিচ্ছি, একটি নাট্যদল দিল্লিতে একই নাটক তিনবার মঞ্চস্থ করেছিল এবং দর্শকপূর্ণ অডিটোরিয়াম তা উপভোগ করেছিল।’
নাসরিন পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, তারা সহিংসতার আশঙ্কার অজুহাতে নাটকটি বন্ধ করেছে। তিনি আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাকে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছিল এই ভেবে যে, আমার উপস্থিতি মৌলবাদীদের দাঙ্গা উসকে দেবে। আমি বুঝতে পারি না, কেন দাঙ্গাকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না আর লেখকদের মুক্ত কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে।’
বিজেপি নাসরিনের অভিযোগকে সমর্থন করেছে। দলটির কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার অভিযোগ করেছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ভণ্ডামি করছেন।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের মৌলবাদীদের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর মৌলিক পার্থক্য প্রায় বিলীন হয়ে গেছে, কারণ তিনি এমন একটি জনপ্রিয় প্রতিবাদী মঞ্চ নাটককে অনুমতি দিচ্ছেন না, যা মৌলবাদবিরোধী, এই আশঙ্কায় যে এটি দাঙ্গা সৃষ্টি করবে।’
সুকান্ত মজুমদার আরও অভিযোগ করেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু উপাসনালয়ে হামলা এবং মূর্তি ভাঙচুরের ঘটনাগুলো উপেক্ষা করছেন। অথচ, তাঁর নীতির বিরোধিতা করা বুদ্ধিজীবীদের কণ্ঠ রোধ করছেন।
বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্টে বলেছেন, ‘যদি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন এবং মুসলিম ভেটোর কারণে এতটাই আতঙ্কিত থাকেন যে শিল্প, সংস্কৃতি ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাও বাধাগ্রস্ত হবে, তবে তাঁর পদত্যাগ করার কথা বিবেচনা করা উচিত।’
গোবরডাঙ্গার নাট্যোৎসবের আয়োজকেরা নিশ্চিত করেছেন যে, ‘লজ্জা’ নাটকটি মঞ্চায়নের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তবে তারা কোনো কারণ জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। রাজ্য পুলিশ কর্মকর্তারা প্রশাসনের নাটক বন্ধ করার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিশ্চিত বা অস্বীকার করেননি।