অনলাইন ডেস্ক
প্রায় এক বছরের আন্দোলনে শেষ পর্যন্ত বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের ঘোষণা দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। গত শুক্রবার শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানকের জন্মদিন উপলক্ষে আইনগুলো বাতিলের ঘোষণা দেন তিনি। ঘোষণাকে স্বাগত জানালেও সংসদে (রাজ্য সভায়) আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে কৃষকদের জোট ‘যুক্ত কিষান মোর্চা (এসকেএম) ’। গতকাল রোববার বৈঠক শেষে এ ঘোষণা দেওয়া হয়।
দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের সিংগু গ্রামে এসকেএমের নেতা বলবীর সিং রাজেওয়াল বলেন, ‘কৃষি আইন প্রত্যাহার নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সংসদে আনুষ্ঠানিক প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’
ভারতের গণমাধ্যম এনডিটিভি জানায়, বৈঠকে উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌতে আজ সোমবার মহাপঞ্চায়েত বা মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। ২৬ নভেম্বর দিল্লির বিভিন্ন উপকণ্ঠে বিক্ষোভ করবেন কৃষকেরা। ২৭ নভেম্বর আরেকটি বৈঠক হবে। ২৯ নভেম্বর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে সংসদ অভিমুখে যাত্রা করবে এসকেএম। আর এ দিনই ভারতে শীলকালীন সংসদ অধিবেশন শুরু হবে, এতে আইনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিলের ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তার আগে আগামী বুধবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনগুলো নিয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।
দাবি-দাওয়া জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বরাবর একটি খোলা চিঠি লেখার ঘোষণার পাশাপাশি গতকাল সুনির্দিষ্ট কিছু দাবি জানিয়েছে এসকেএম। এতে ‘সর্বনিম্ন সহায়ক মূল্য’ বা এমএসপি নিয়ে একটি আইন পাশ এবং এক বছরে বিক্ষোভ সংশ্লিষ্ট যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে, তা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়েছে। এক বছর পরে কৃষক আইন প্রত্যাহার মোদি সরকারের সাত বছরের শাসনামলের সবচেয়ে বড় পরাজয় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। আগামী বছরের শুরুতে কৃষক অধ্যুষিত পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই যে আইনগুলো প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা নিয়ে সবাই মোটামুটি একমত।
তবে, বিশাল জনসংখ্যা ও শংকর সংস্কৃতির দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতাই যে সব কথা নয়, তা কৃষি আইন বাতিলের মধ্যে সুস্পষ্ট বলে মনে করেন প্রবীণ সাংবাদিক ও দ্য প্রিন্টের সম্পাদক শেখর গুপ্ত।
প্রসঙ্গত, গত অর্থবছরে ভারতের জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান প্রায় সাড়ে ১৫ শতাংশ। দেশটির ৪০ শতাংশের বেশি কর্মসংস্থান এ খাতে। গুরুত্বপূর্ণ খাতটি সংস্কার করতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে তড়িঘড়ি করে তিনটি কৃষি আইন পাশ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের রাজ্যসভা।
কৃষকের উপকারের জন্য আইনগুলো করা হয়েছে বলা হলেও কৃষকেরা আইনগুলোর বিরোধিতা করে গত বছরের ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান নেওয়া শুরু করে। কৃষক প্রধান পাঞ্জাব, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা এবং রাজস্থানের কৃষকেরা বেশি হলেও বিভিন্ন রাজ্যের কৃষক, কৃষক নেতা ও সাধারণ মানুষ যোগ এতে যোগ দেন।
আন্দোলন চলাকালে সাত শতাধিক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। তা ছাড়া গত মাসের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের ছেলে আশিস মিশ্রের গাড়ি চাপায় আটজন আন্দোলনকারী নিহত হয়েছেন।