দিদির সঙ্গে দাদার কি গোপন কোনো সমঝোতা হয়েছে? দাদা কি দিদির হয়ে রাজ্যসভায় ব্যাট হাতে নামবেন? পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন জল্পনার জন্ম দিয়েছে মহারাজার ৪৯তম জন্মদিন।
ভারতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবং ক্রিকেট নিয়ন্ত্রক সংস্থার বর্তমান চেয়ারম্যান ‘দাদা’ সৌরভ গাঙ্গুলীর জন্মদিনে ‘দিদি’, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি রাজ্য রাজনীতিতে জন্ম দিয়েছে নতুন জল্পনার।
গত বিধানসভা নির্বাচনে সৌরভকে দিদির বিরুদ্ধে নামানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছে বিজেপি। ঘনিষ্ঠ মহলে এ কথা স্বীকারও করেছেন সৌরভ। কিন্তু সাবেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রাজনীতিতে নামতে রাজি হননি।
বিজেপি সৌরভের জনপ্রিয়তা কাজে লাগাতে চেয়েছিল। সাবেক মন্ত্রী ও সিপিএম নেতা অশোক ভট্টাচার্য সেই সময়ে কড়া সমালোচনা করেছিলেন বিজেপির। তাঁর অভিযোগ, বিজেপির চাপেই সৌরভ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
উল্লেখ্য, পশ্চিমবঙ্গে ভোটের আগে দুবার হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হৃদ্রোগ ধরা পড়ে। বসানো হয় স্টেন।
বিজেপির সাবেক সভাপতি তথা ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর ছেলে বর্তমান বিসিসিআইয়ের সচিব। আর এই সংস্থার সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী। অনেকেই মনে করেন, অমিত শাহ ও নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং সৌরভকে মমতার বিরুদ্ধে লড়তে বলেছিলেন।
সৌরভ বিজেপিতে না যাওয়ায় খুশি তৃণমূল। আর সেটা আরও স্পষ্ট হলো, বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রথমবারের মতো সৌরভের জন্মদিনে কলকাতার বেহালায় তাঁর বাড়িতে গিয়ে শুভেচ্ছা জানিয়ে আসায়।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বলা হয়, নিছকই সৌজন্য সাক্ষাৎ। জন্মদিনে সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার সৌরভকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর পেছনে কোনো রাজনীতি নেই। দলের পক্ষ থেকে এ–ও মনে করিয়ে দেওয়া হয়, হাসপাতালে অসুস্থ থাকার সময়ও সৌরভকে দেখতে গিয়েছিলেন ‘মমতাময়ী’ মুখ্যমন্ত্রী।
কিন্তু এর মধ্যেও রাজনৈতিক জল্পনা বাড়িয়ে দিয়েছেন খোদ বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে কটাক্ষও করেছেন মমতাকে।
পশ্চিমবঙ্গ থেকে ভারতের জাতীয় সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভার দুটি আসন খালি রয়েছে। সেই আসনে ভোট আসন্ন। রাজ্যসভার ভোটের অঙ্ক বলছে, দুটি আসনেই জিতবেন তৃণমূল প্রার্থীই।
সেদিকে লক্ষ্য রেখে দিলীপ ঘোষ আজ শুক্রবার বলেন, সৌরভ দাঁড়ালে তাঁদের কোনো আপত্তি নেই। সেই সঙ্গে কটাক্ষ, ‘পশ্চিমবঙ্গে আরও অনেক মহাপুরুষ রয়েছেন।’
দিলীপ আরও বলেন, ‘যতই মুখ্যমন্ত্রী শুভেচ্ছা বার্তা জানাতে সৌরভের বাড়িতে যান না কেন, আমরা জানি রাজনীতির বাইরে নেতা-নেত্রীরা এক পা–ও কোথাও রাখতে পারেন না।’
দিলীপের এই মন্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে তৃণমূল। জাতীয় সংসদের সদস্য সুখেন্দু শেখর রায় দিলীপ ঘোষের রুচিবোধ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তাঁর মতে, সৌরভের মতো বিখ্যাত ক্রিকেটারের জন্মদিনে মুখ্যমন্ত্রীর শুভেচ্ছা জানাতে যাওয়ার মতো ঘটনার পেছনেও রাজনীতির গন্ধ খোঁজা কুরুচির পরিচায়ক।