অনলাইন ডেস্ক
প্রেমিকের প্রতি অন্ধবিশ্বাস এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতিকে সত্য ভেবে বেঙ্গালুরুর এক ২০ বছরের তরুণী নিজ পরিবারের ২ কোটি ৫৭ লাখ রুপির সম্পদ হারিয়েছেন। ওই তরুণীর কথিত প্রেমিক তাঁদের ব্যক্তিগত ও ঘনিষ্ঠ মুহূর্তের ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে তরুণীর কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ, দামি ঘড়ি, গয়না এবং একটি বিলাসবহুল গাড়ি আদায় করেন।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে। পুলিশ জানিয়েছে, ব্ল্যাকমেলের ঘটনাটি মাসের পর মাস চলতে থাকে। ভুক্তভোগী তরুণী ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন এবং শেষ পর্যন্ত আর সহ্য করতে না পেরে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে কথিত প্রেমিক মোহন কুমারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, তরুণী ও মোহন কুমারের পরিচয় স্কুলজীবনে বোর্ডিং স্কুলে পড়ার সময়। তখন তাঁরা ভালো বন্ধু ছিলেন। তবে স্কুলের পড়া শেষ হওয়ার পর তাঁদের মধ্যে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কয়েক বছর পর তাঁদের আবার দেখা হয় এবং সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব প্রেমে রূপ নেয়।
প্রেমের সম্পর্ক গভীর হওয়ার পর কুমার তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেন। একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যকার অন্তরঙ্গ সম্পর্কের ভিডিও ধারণ করেন কুমার। ভুক্তভোগী তরুণীকে তিনি আশ্বস্ত করেছিলেন যে, ভিডিওগুলো কেবল তাঁর কাছেই থাকবে এবং অন্য কোথাও এটি ব্যবহার করা হবে না।
তরুণীর বয়ানের ভিত্তিতে পুলিশ জানিয়েছে, কুমার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে ভিডিওগুলোতে কিছুতেই নিজের মুখ স্পষ্ট না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর তিনি ওই ভিডিওগুলোর মাধ্যমে তরুণীকে ব্ল্যাকমেল করা শুরু করেন। তিনি হুমকি দেন যে, তাঁকে বড় অঙ্কের অর্থ না দেওয়া হলে তিনি ভিডিওগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে দেবেন।
ভয়ে ও মানসিক চাপের কারণে তরুণী গোপনে তাঁর দাদির অ্যাকাউন্ট থেকে ১ কোটি ২৫ লাখ রুপি তুলে কুমারের দেওয়া কয়েকটি অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেন। তবে কুমার এখানেই থেমে থাকেননি। তিনি আরও টাকা দাবি করতে থাকেন এবং তরুণী বিভিন্ন সময়ে তাঁর হাতে মোট ১ কোটি ৩২ লাখ রুপি নগদ তুলে দেন।
এ ছাড়া, কুমারের দাবির চাপে তরুণী তাঁকে বিলাসবহুল গাড়ি, দামি ঘড়ি এবং গয়নাও প্রদান করেন। এমনকি তিনি একাধিকবার কুমারের বাবার অ্যাকাউন্টেও টাকা পাঠিয়েছেন। ব্ল্যাকমেল এবং অর্থ আদায়ের এই ঘটনা দিনের পর দিন চলতে থাকলে ভুক্তভোগী তরুণী সাহস সঞ্চয় করে পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন। বেঙ্গালুরু পুলিশ তদন্ত শুরু করে মোহন কুমারকে গ্রেপ্তার করে।
বেঙ্গালুরু পুলিশের কমিশনার বি দয়ানন্দ বলেন, ‘এটি একটি সুপরিকল্পিত এবং ধারাবাহিক অপরাধ। অভিযুক্ত মোট ২ কোটি ৫৭ লাখ রুপি আদায় করেছেন, যার মধ্যে ৮০ লাখ টাকা আমরা উদ্ধার করতে পেরেছি। এখনো তদন্ত চলছে।’
পুলিশ আরও জানিয়েছে, মোহন কুমার প্রথম থেকেই অর্থ আদায়ের জন্য পুরো বিষয়টি পরিকল্পনা করেছিলেন। ভুক্তভোগী তরুণী এখন পুলিশের তত্ত্বাবধানে আছেন এবং তাঁর মানসিক সুরক্ষার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।