ভারতের কিংবদন্তি শিল্পপতি রতন টাটার বিশাল সম্পত্তি কীভাবে বণ্টন হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছিল জল্পনা-কল্পনা। তবে সম্প্রতি আদালতে জমা দেওয়া তাঁর উইল থেকে জানা গেছে, প্রয়াত এই শিল্পপতির প্রায় ৩ হাজার ৮০০ কোটি রুপির সম্পত্তির বেশির ভাগ অংশই দাতব্য ও সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইকোনমিক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রতন টাটা এন্ডাওমেন্ট ফাউন্ডেশন ও রতন টাটা এন্ডাওমেন্ট ট্রাস্ট এই সম্পদের মূল সুবিধাভোগী হবে। এই দুটি সংস্থাই রতন টাটার প্রতিষ্ঠিত, যারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সমাজসেবামূলক কাজ করে থাকে।
২০২২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি তারিখে তৈরি করা এই উইলে উল্লেখ করা হয়েছে, টাটার বেশির ভাগ সম্পদ তাঁর প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় করা হবে। টাটা সন্সের সাধারণ ও প্রেফারেন্স শেয়ারসহ অন্যান্য আর্থিক সম্পদ প্রধানত এই দুই সংস্থার হাতে যাবে।
তবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব ও ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের জন্যও একটি বড় অংশ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উইলের তথ্য অনুযায়ী, ৮০০ কোটি রুপির অন্যান্য আর্থিক সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে ব্যাংকের স্থায়ী আমানত, বিনিয়োগ ও শিল্পকর্ম। এসব সম্পদ তিন ভাগে ভাগ করা হবে। রতন টাটার দুই সৎবোন শিরিন জিজিবয় ও ডিয়ানা জিজিবয় এবং টাটা গ্রুপের সাবেক কর্মী মোহিনী এম দত্ত এই সম্পদের অংশ পাবেন। রতন টাটার ভাই জিমি নাভাল টাটা টাটা-পরিবারের মুম্বাইয়ের জুহু বাংলোর একটি অংশ পাবেন।
রতন টাটার ঘনিষ্ঠ বন্ধু মেহলি মিস্ত্রি আলিবাগের সম্পত্তি ও রতন টাটার পছন্দের তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র (যার মধ্যে একটি .২৫ বোর পিস্তল রয়েছে) পাবেন।
এ ছাড়া রতন টাটার ৬৫টি বিলাসবহুল ঘড়ির সংগ্রহ, যার মধ্যে বুলগারি, পাটেক ফিলিপ, টিসট ও অডেমার পিগুয়ের মতো ব্র্যান্ডের কিছু সম্পদ রয়েছে।
রতন টাটার বিদেশি সম্পদের মধ্যে রয়েছে সেশেলসে ৪০ কোটি রুপি মূল্যের সম্পত্তি, ওয়েলস ফার্গো ও মর্গান স্ট্যানলিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আলকোয়া কর্প ও হাওমেট অ্যারোস্পেসের শেয়ার।
উইলের তথ্য অনুযায়ী, সেশেলসের জমিগুলো আরএনটি অ্যাসোসিয়েটস সিঙ্গাপুরে স্থানান্তর করা হবে। সেখানে আর ভেঙ্কটরামন ও প্যাট্রিক ম্যাকগোলড্রিক এগুলো দেখাশোনা করবেন।
জীবদ্দশায় রতন টাটা পশুপ্রেমী ছিলেন। তাঁর উইলেও এর প্রতিফলন দেখা গেছে। তিনি তাঁর পোষা প্রাণীদের যত্নে ১২ লাখ রুপি বরাদ্দ করে গেছেন। প্রতিটি পোষ্য প্রাণীর জন্য তিন মাসে ৩০ হাজার রুপি করে দেওয়া হবে।
টাটা তাঁর সহকারী শান্তনু নাইডুর শিক্ষাঋণ মওকুফ করে দিয়ে গেছেন। উইলে তাঁর প্রতিবেশী জেক মালাইটের জন্যও সুদমুক্ত শিক্ষাঋণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।
আদালত জানিয়েছেন, উইল অনুমোদন ও সম্পদ বণ্টনের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হতে প্রায় ছয় মাস সময় লাগতে পারে।
প্রসঙ্গত, রতন টাটা ২০২৪ সালের ৯ অক্টোবর মারা যান।