অনলাইন ডেস্ক
ভারতের দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির প্রতিষ্ঠাতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল গত বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ তদন্তের পর কেন্দ্রীয় সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডাইরেক্টরেট (ইডি) তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। এরপর থেকে বিজেপি সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছেন বিরোধীরা। অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে এবার ‘বিপ্লব’ হবে।
কেজরিওয়ালকে এমন সময়ে গ্রেপ্তার করা হলো, যখন লোকসভা নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে ভারত। এমন ঘটনা অন্য বিরোধী দলের নেতাদের সঙ্গেও ঘটছে। কারও বাড়িতে তল্লাশি চলছে, কেউ কেউ গ্রেপ্তার হচ্ছেন। দেশটির অন্যতম বড় দল কংগ্রেস অভিযোগ করেছে, তারা প্রচারের অর্থ জোগান দিতে পারছে না। কারণ, কর ফাঁকির অভিযোগে তাদের সব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে।
কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার দিল্লিতে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বলা যায়। কারণ এর আগে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা অবস্থায় কেউ গ্রেপ্তার হননি। কেজরিওয়াল গ্রেপ্তারের পর আম আদমি পার্টির মুখপাত্র বলেছেন, ‘মোদির নোংরা রাজনীতির শিকার কেজরিওয়াল। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করবেন না, জেল থেকেই দিল্লি সরকার চালাবেন।’
কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলা আছে। এই মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁকে ৯ বার ডাকা হয়েছিল। তিনি সাড়া দেননি। এরপর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ প্রসঙ্গে দিল্লির স্বাস্থ্যমন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেছেন, ‘সব মোদির খেয়াল। এ পর্যন্ত সরকার দুজন মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা আরও মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করতে পারে, এটা সম্ভব।’
গত মাসে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সরেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পদত্যাগের কয়েক ঘণ্টা পরই দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হন এই নেতা। সরেন ঝাড়খন্ড মুক্তি মোর্চার নেতা। আম আদমি পার্টি, কংগ্রেসের মতো এই মোর্চাও বিজেপিবিরোধী ‘ইন্ডিয়া’ জোটে আছে। এই জোট আশা করছে, মোদির টানা তৃতীয়বার ক্ষমতায় আসা ঠেকানো যাবে এবার।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই নেতাদের গ্রেপ্তার মোদি এবং তাঁর দল বিজেপির জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। এমন গ্রেপ্তারের কারণে তাঁরা জনগণের সহমর্মিতা পাবেন। বিরোধীদের জোট ভাঙার বদলে এসব গ্রেপ্তারের ঘটনা তাঁদের আরও জোটবদ্ধ করবে।
এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক বিশ্লেষক অসিম আলী বলেন, কেজরিওয়ালের বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে মোদি সরকার শুধু নিজের কর্তৃত্ববাদী এবং খ্যাপাটে ঘোড়া হিসেবে জাহির করল তা-ই নয়; বরং এর মাধ্যমে দোদুল্যমান ভোটারদের আম আদমিকে ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করল। তিনি আরও বলেন, ‘কেজরিওয়ালকে শহীদি মর্যাদা পাওয়ার সুযোগ করে দিল বিজেপি।’
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান আকার প্যাটেল বলেন, ভারতে যে মানবাধিকার নির্লজ্জভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে, কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার তারই অংশ।
আল-জাজিরার থেকে সংক্ষেপিত