১১ মার্চ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (সিএএ) বাস্তবায়ন করেছে ভারত সরকার। এর ফলে দেশটিতে ২০১৪ সালের আগ পর্যন্ত আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে হিন্দু, শিখ, জৈন, পারসি, বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের অভিবাসীদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে। তবে এ বিষয়ে একটি জটিল প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছেন ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
আজ বৃহস্পতিবার সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে অমিত শাহকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—কেন পারসি এবং খ্রিষ্টানদের সিএএয়ের অধীনে নাগরিকত্ব দেওয়া হলেও মুসলিম শরণার্থীদের দেওয়া হয়নি?
এ সময় বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘মুসলিম জনসংখ্যার কারণেই কয়েকটি অঞ্চল আজ আর ভারতের অংশ নয়। এসব অঞ্চল তাদের বসবাসের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি, যারা অখণ্ড ভারতের অংশ ছিল এবং যারা ধর্মীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছিল তাদের আশ্রয় দেওয়া আমাদের নৈতিক ও সাংবিধানিক দায়িত্ব।’
অখণ্ড ভারত হলো এমন একটি বৃহত্তর ভারতের ধারণা—যা আজকের দিনের আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, মিয়ানমার, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও তিব্বত পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
অমিত শাহ বলেন, ‘দেশ ভাগের সময় পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ২৩ শতাংশ ছিল হিন্দু। এখন তা মাত্র ৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে। বাকিরা তাহলে কোথায় গেল? এত মানুষ এখানে (ভারত) আসেনি। জোর করে তাদের ধর্মান্তরিত করা হয়েছে, অপমান করা হয়েছে, দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক হিসেবে আচরণ করা হয়েছে। তারা যাবে কোথায়? আমাদের সংসদ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কি উচিত নয়, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার?’
অমিত শাহ জানান, ১৯৫১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যার ২২ শতাংশ হিন্দু ছিল। কিন্তু ২০১১ সালে এই জনগোষ্ঠী মাত্র ১০ শতাংশে নেমে এসেছে। এ অবস্থায় ১২ শতাংশ হিন্দুর অস্তিত্ব লোপ পাওয়া নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, ১৯৯২ সালে আফগানিস্তানে ২ লাখ শিখ এবং হিন্দু ছিল। আর এখন অবশিষ্ট আছে মাত্র ৫০০ জন। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস অনুযায়ী (ধর্মীয়) তাদের কি বাঁচার অধিকার নেই? ভারত যখন এক ছিল, তারা আমাদের ছিল। তারা আমাদের ভাই-বোন এবং মা।’
শিয়া, বেলুচ ও আহমদিয়া মুসলিমরাও নির্যাতিত হয়েছে জানিয়ে এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অমিত শাহ জানান, চাইলে মুসলমানরাও তাঁর দেশে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারেন। দেশের সংবিধানে এই বিধান রয়েছে। তবে জাতীয় নিরাপত্তা এবং অন্যান্য বিষয় মাথায় রেখে ভারত সরকার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সিএএ হলো তিনটি দেশের নির্যাতিত সংখ্যালঘুদের জন্য একটি বিশেষ আইন—যারা কোনো বৈধ নথি ছাড়াই সীমান্ত অতিক্রম করেছিলেন।’