অনলাইন ডেস্ক
কৃষিপণ্যের সর্বনিম্ন মূল্যের (এমএসপি) দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকেরা এখন ভারতের নিরাপত্তা বাহিনীর মুখোমুখি। আর এ অবস্থায় কৃষকদের আন্দোলনে তাদের নিরাপত্তা দিতে যোগ দিয়েছে নিহাং বা, শিখ যোদ্ধারা। নিহাং হচ্ছে শিখদের একটি যোদ্ধা সম্প্রদায় যাদের উদ্ভব ১৬০০ শতকে। নীল পোশাক এবং তলোয়ার-বর্শার মতো প্রাচীন অস্ত্রের ব্যবহার তাদের আলাদাভাবে পরিচিত করেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য পাঞ্জাব থেকে আসা আন্দোলনরত কৃষকদের অধিকাংশই শিখ। কৃষিপণ্যের ন্যূনতম মূল্য নিশ্চিতের দাবির প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে দিল্লি অভিমুখে ‘দিল্লি চলো’ আন্দোলনে নামেন ভারতের কৃষকেরা। কৃষকদের দুই শতাধিক সংগঠন এবং হরিয়ানা, পাঞ্জাব ও উত্তর প্রদেশের লক্ষাধিক কৃষক এই কর্মসূচি পালন করেছেন।
রাজধানী থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরে ব্যারিকেড দিয়ে তাদের দিল্লি অভিমুখে যাত্রা থামানোর চেষ্টা করেছিল পুলিশ। এরপর কৃষক ইউনিয়নের সঙ্গে বৈঠকের ঘোষণা দেয় ভারত সরকার।
কিন্তু এমএসপি তালিকাভুক্ত ২৩টি কৃষি পণ্যের মধ্যে মাত্র পাঁচটি—তুলা, ডাল (৩ ধরনের) ও ভুট্টা—পণ্যের বিষয়ে পাঁচ বছরের চুক্তিভিত্তিক সুবিধা দিতে চেয়েছিল সরকার। কিন্তু কৃষকেরা তাতে সাড়া না দিয়ে ফের যাত্রা শুরু করেছেন।
বিক্ষোভকারীদের একজন মারা যাওয়ার পর গত বুধবার দুই দিনের জন্য বিক্ষোভ বন্ধ রাখার কথা বলেছিলেন কৃষকেরা। বিক্ষোভকারীর মৃত্যু প্রসঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তিনি প্রতিবাদস্থলে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ জানা যাবে ময়নাতদন্তের পর।
মার্চে আবার আন্দোলন শুরুর অপেক্ষা করছেন যখন কৃষকেরা, তখনই শিখ যোদ্ধারা যোগ দিয়েছেন কৃষকদের সঙ্গে। একই ধরনের পোশাক ও পাগড়িতে সহজেই আলাদা করা যায় এই শিখ যোদ্ধাদের। কয়েকজন নিহাং অর্থাৎ, শিখ যোদ্ধা জানিয়েছেন, তারা কৃষকদের রক্ষা করতে আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
শের সিং নামের এক নিহাং তাদের আধ্যাত্মিক গুরুর শিক্ষা তুলে ধরে বলেন, ‘গুরু গোবিন্দ সিং সব সময় প্রচার করেছেন যে, শিখদের সর্বদা অন্যায় ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। মাঝরাতেও যদি কোনো আন্দোলনকারীর ওপর হামলা হয়, সে জন্যও আমরা প্রস্তুত আছি।’
পাঞ্জাবের ৩ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি ভারতের সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়। ২০২১ সালে এ রকম আরেকটি বছরব্যাপী আন্দোলনেও যোগ দিয়েছিল নিহাং যোদ্ধারা।
আরেক নিহাং যোদ্ধা রাজা রাম সিং বলেন, ‘কৃষকেরা নিপীড়িত হচ্ছে। সরকারের এখন আর ভাবা উচিত হবে না যে, তারা কৃষকদের ভয় দেখাতে পারবে। এটা পাঞ্জাব এবং আমরা কৃষকদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।’
স্থানীয় গণমাধ্যম অনুসারে, ২০২১ সালের মার্চে প্রতিবাদস্থলে এক শিখ ব্যক্তিকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন তিন নিহাং যোদ্ধা। শিখদের পবিত্র গ্রন্থ অবমাননা করায় সেই ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল বলে নিহাংদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। নিহাংরা সেই অভিযোগ অস্বীকার করেনি।