২০১৬ সালে ভারতে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে মুসলিমদের প্রতি বৈষম্যমূলক নানা নীতি ঘোষণা করে হিন্দু ও আদিবাসী সম্প্রদায়ের ভোট টানার চেষ্টা চলছে বলে সমালোচকরা বলে থাকেন। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মাসহ বেশ কয়েকজন রাজনীতিকের নানা সময়ের বক্তব্য থেকেও তার আভাস মেলে। এর মধ্যেই এই রাজ্যে মুসলিমদের তৈরি একটি জাদুঘরকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে বলে বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
গোয়ালপাড়া জেলার ছোট্ট এক গ্রামে স্থানীয় এক মুসলিম নেতা ‘মিয়া মিউজিয়াম’ নামে ওই জাদুঘরটি চালু করার দুই দিনের মধ্যে তা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। শুধু তাই নয়, জাদুঘরের উদ্যোক্তা নেতা মিয়া পরিষদের সভাপতি মোহর আলিকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ। সরকারি অনুদানের জমিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে নির্মাণ করায় জাদুঘরটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
শুধু মোহর আলী নয়, আরও কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাঁদের আটক করার কথা বলছে পুলিশ। এর আগে ‘মিয়া’ জাদুঘর করার জন্য ‘জঙ্গিগোষ্ঠীর কাছ থেকে মোহর আলি অর্থ সহায়তা’ নিয়েছেন বলে গুঞ্জন ওঠে।
এদিকে গ্রেপ্তারের ঘটনার পর আসামের সংখ্যালঘু মুসলিমরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন। আতঙ্কের কারণে গণমাধ্যমের সঙ্গে জাদুঘর বিষয়ে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না অনেকে। আবার বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, ‘আমাদের জাদুঘর লাগবে না, চাকরি চাই, রাস্তাঘাট আর বিদ্যুৎ চাই’।
এ বিষয়ে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, ‘মিয়া মিউজিয়াম’ করা হয়েছে অবৈধভাবে। এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি জাদুঘরের জন্য অর্থ কোথা থেকে এল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
শেরমান বিবিসিকে বলেন, ‘মোহর আলি সরকারি অনুদান দেওয়া বাড়িতে জাদুঘর নির্মাণ করে ঠিক করেননি, তবে তাঁর জন্য এমন শাস্তি কাম্য নয়। তিনি কোনো বড় অপরাধ করেননি।’
মুসলিম কমিউনিটিকে ভয় দেখানোর জন্যই মোহর এবং অন্যদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
গোয়ালপাড়া গ্রামের ছোট একটি ঘরে স্থাপিত ‘মিয়া’ মিউজিয়ামে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কিছু কৃষি সরঞ্জাম, বাঁশের তৈরি মাছ ধরার সরঞ্জাম এবং আসামের ঐতিহ্যবাহী হাতে বোনা পোশাক গামুছা—এর সবগুলো ‘মিয়া’ সংস্কৃতির অংশ।
দক্ষিণ এশিয়ায় ‘মিয়া’ শব্দটি মুসলিম পুরুষদের জন্য একটি সম্মানজনক উপাধি হিসাবে ব্যবহৃত হয়। তবে আসামে, ‘মিয়া’ হিসেবে পরিচিত মুসলিম কৃষকরা, যারা তৎকালীন পূর্ব বাংলা বর্তমান বাংলাদেশ থেকে আসামে অভিবাসন করেছিলেন।