অনলাইন ডেস্ক
ভারতের গুজরাট রাজ্যে ২০০২ সালের দাঙ্গার সময় বিলকিস বানু নামে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ১১ জন ছাড়া পেয়েছেন। স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার গুজরাটের রাজ্য সরকার তাদের মুক্তি দেয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘বিলকিস বানু মামলা’ নামে বহুল আলোচিত ওই মামলায় আদালত ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। পরে সাজাপ্রাপ্তদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার তাদের মুক্তি দেয়। সোমবার গুজরাটের গোধরা জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয়।
এদিকে, ওই ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ায় গুজরাট সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছে ভারত। এই বিষয়ে ভারতের রাজনীতিতে আলোচিত মুখ ও দেশটির এমপি আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বলেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবসে লাল কেল্লা থেকে নারীর ক্ষমতায়নের কথা বলেন, আর একই দিনে এমন অপরাধীদের মুক্তি দেওয়া হয়। এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের কাছে একটি ভুল বার্তা পাঠাবে। এই ঘটনা বিলকিস বানুকে আবারও কষ্টের মুখে ফেলবে। আমি আশা করব শিগগিরই বিজেপির শুভ বুদ্ধির উদয় হবে।’
২০০২ সালের ওই দাঙ্গায় হিন্দু তীর্থযাত্রীবাহী একটি ট্রেনে অগ্নিসংযোগের পর ৫৯ জনের মৃত্যু হয়। সেসময় স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় ওই ঘটনার জন্য মুসলমানদেরই দায়ী করে থাকে। পরের কয়েক দিন ধরে চলা সহিংসতায় সব মিলিয়ে ২ হাজার মানুষ মারা যান। যাদের অধিকাংশই মুসলমান। এবং এই সময় কয়েক শ নারী ধর্ষণের শিকার হন। তাদেরই একজন বিলকিস বানু।
২০০২ সালের ৩ মার্চের এক সহিংস ঘটনায় বিলকিস বানু গুজরাটের দাহোদ জেলার লিমখেদায় সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ওই সময় তাঁর ৩ বছরের কন্যা সন্তান সালেহাসহ ১৪ জনকে হত্যা করা হয়। আদালত এক আদেশে জানায়, সালেহাকে হত্যার আগে তার মাথা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। সেই সময় বিলকিস বানুর বয়স ছিল ২১ বছর এবং তিনি ৫ মাসের গর্ভবতী ছিলেন। বিলকিস বানু পরে আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় জানিয়েছিলেন তাঁকে ধর্ষণ করা ১১ জনই তাঁর আশপাশের প্রতিবেশী।
গুজরাট প্রশাসনে জ্যেষ্ঠ আমলা রাজ কুমার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, ওই ১১ জনের আবেদনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে কারণ তাঁরা এরই মধ্যে ১৪ বছর সাজা খেটেছেন। ভারতে সাধারণত যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বলতে ১৪ বছরই বোঝানো হয়।
ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোকে (সিবিআই) ঘটনাটির তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়। পরে সুপ্রিম কোর্ট মামলাটি গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্রের আদালতে স্থানান্তর করে। পরে ওই মামলায় আদালত ১১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। এ ছাড়া, দীর্ঘ ১৭ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর ২০১৯ সালে আদালত বিলকিস বানুকে ৫০ লাখ রুপি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত।