অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা : নতুন তথ্যপ্রযুক্তি নীতির শর্ত পূরণ করতে না পারায় ভারতে আইনি রক্ষাকবচ হারাল জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার। কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মকর্তার বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি এমনটি জানিয়েছে। ভারতে সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগও উঠেছে টুইটারের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার উত্তর প্রদেশে টুইটারের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৭৯ ধারায় টুইটার আর আইনি রক্ষাকবচ পাবে না। সরকারি বিধি লঙ্ঘন করায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে রক্ষাকবচ হারিয়েছে টুইটার। এখন থেকে যেকোনো ধারায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা যাবে।
ওই কর্মকর্তা বলেছেন, ‘এখন যদি আদালতে কোনো মামলা হয়, তথ্যপ্রযুক্তি আইনের আওতায় সুরক্ষা পাবে না টুইটার। তার ফলে রেহাই পাওয়ার আবেদনও তারা জানাতে পারবে না।’
সংবাদ সংস্থা এএনআইকে এক সরকারি সূত্র জানিয়েছে, জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে একমাত্র টুইটারই ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের শর্ত পূরণ করেনি; যে নীতি অনুযায়ী সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থাগুলোকে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার, রেসিডেন্ট গ্রিভান্স অফিসারসহ ভারতের জন্য একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু প্রথম থেকেই সেই নীতি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে টুইটার। গত ৫ জুন কেন্দ্রের ‘চূড়ান্ত’ নোটিশের পর অবশ্য সুর নরম করে মাইক্রো ব্লগিং সাইট। তখন টুইটার জানায়, ভারত সরকারের নতুন নীতি মেনে চলবে তারা। এক সপ্তাহের মধ্যে শর্ত পূরণেরও আশ্বাস দেয় টুইটার।
গতকাল মঙ্গলবার টুইটারের পক্ষ জানানো হয়, নতুন নীতি নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। নিয়োগ করা হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসারও। সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই ভারত সরকারকে জানানো হবে। নয়া নীতি অনুযায়ী, কোনো রকম নিয়ম ভঙ্গের ক্ষেত্রে চিফ কমপ্লায়েন্স অফিসার আইনি ব্যবস্থার মুখে পড়তে পারেন। মাইক্রো ব্লগিং সাইটের তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, ‘নয়া নীতি পূরণের জন্য সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে টুইটার।’
এদিকে উত্তর প্রদেশে টুইটারের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া মামলার অভিযোগে বলা হয়েছে, সম্প্রতি একদল দুর্বৃত্তের হাতে নির্যাতিত হন সুফি আবদুল সামাদ নামের এক বৃদ্ধ। সেই ঘটনার ভিডিও ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। অভিযোগ ওঠে, মাদুলি ও কবচ বিক্রি করার দায়ে ওই বৃদ্ধকে ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘জয় শ্রীরাম’ বলতে বাধ্য করা করে দুর্বৃত্তরা। এমনকি তাঁর দাড়িও কেটে নেওয়া হয়।
এ নিয়ে ভারতে তীব্র নিন্দা করেছেন বিশিষ্টজনেরা। সংবাদমাধ্যমেও উত্তর প্রদেশের শাসনব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু ইচ্ছাকৃতভাবে এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়া হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেছে উত্তর প্রদেশ পুলিশ। তাদের দাবি, ভুল বুঝিয়ে কবচ বিক্রির জন্য ওই বৃদ্ধের ওপর রেগে ছিলেন অনেকে। এটা কোনো সাম্প্রদায়িক হিংসার ঘটনা নয়; বরং হিন্দু-মুসলিম দুই পক্ষের ছয়জন মিলে হামলা চালান।
উত্তর প্রদেশ পুলিশের অভিযোগ, এ ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক রূপ দেওয়ার জন্য দায়ী টুইটার কর্তৃপক্ষই। যদিও লিখিত বিবৃতিতে সেই অভিযোগ খারিজ করে দেয় টুইটার, যা গত সোমবার উত্তর প্রদেশ পুলিশ সবার সামনে তুলেও ধরে। কিন্তু তাদের দাবি, সতর্ক করা সত্ত্বেও ওই ঘটনায় সাম্প্রদায়িক মন্তব্যগুলো সরায়নি টুইটার।