১৩ বছর আগে ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরিবারের আরও পাঁচ সদস্যসহ নিখোঁজ হয়েছিলেন ভারতের বলিউড অভিনেত্রী লায়লা খান। এক বছর পর মহারাষ্ট্রের ইগতপুরিতে অবস্থিত নিজেদের একটি খামারবাড়ির মাটি খুঁড়েই তাঁদের পচাগলা মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের দায়ে আজ শুক্রবার মুম্বাইয়ের একটি দায়রা আদালত লায়লা খানের মায়ের তৃতীয় স্বামী পারভেজ তাককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন। এর আগে ৯ মে একই আদালত ওই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পারভেজকে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন।
এ বিষয়ে এক প্রতিবেদনে হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার আগে লায়লা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের ইগতপুরিতে পারভেজ তাকের সঙ্গেই সর্বশেষ দেখা গিয়েছিল। লায়লা ছাড়া নিহত অন্যদের মধ্যে ছিলেন তাঁর মা শেলিনা, ৩২ বছর বয়সী বড় বোন আজমিনা, ২৫ বছর বয়সী যমজ ভাইবোন জারা ও ইমরান এবং লায়লার খালাতো বোন রেশমা।
ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশের সন্দেহ ছিল—মুম্বাইয়ের ওশিওয়ারায় অবস্থিত একটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান, মিরা রোডের আরেকটি ফ্ল্যাট এবং ইগতপুরির খামারবাড়িসহ গয়না, নগদ অর্থ ও সম্পত্তি দখল করার জন্য পারভেজই তাঁদের খুন করেছেন।
লায়লার মা শেলিনের দ্বিতীয় স্বামী আসিফ শেখও অভিযোগ করেছিলেন, লায়লা ও তাঁর বোনদের পতিতাবৃত্তিতে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন পারভেজ তাক।
পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের এক বছর আগে ২০১০ সালে আজমিনা, রেশমা ও জারা দুবাই গিয়ে পারভেজ তাকের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা ভারতে ফিরে আসার পর পারভেজের সঙ্গে উপার্জনের অর্থ ভাগাভাগি করতে অস্বীকার করেন। এ ঘটনার জের ধরে পারভেজ তাকের সঙ্গে ওই পরিবারের সম্পর্ক খারাপ হয়ে যায়।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, উপার্জনের ভাগ না দেওয়ার ঘটনাটি পারভেজকে অসন্তুষ্ট করেছিল। তাই তিনি লায়লার পরিবারকে পুরোপুরি শেষ করে দেওয়ার জন্য একজন পলাতক আসামির সঙ্গে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তাঁরা ইগতপুরিতে অবস্থিত খামারবাড়িটিকেই বেছে নেন। সে অনুযায়ী, পলাতক আসামি শাকির হুসেন ওয়ানিকে ইগতপুরির খামারবাড়িতে প্রহরী হিসেবে নিয়োগ করা করেন পারভেজ।
২০১১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি লায়লাসহ তাঁর পরিবারের সবাই, এমনকি পারভেজ তাকও ইগতপুরির খামারবাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় লায়লার মা শেলিনার সঙ্গে পারভেজের ঝগড়া হয় এবং পারভেজ একটি ভোঁতা অস্ত্র দিয়ে শেলিনাকে আঘাত করলে তাঁর মৃত্যু হয়। পরিবারের অন্য সদস্যরা সাহায্যের জন্য ছুটে এলে সেই প্রহরীর সহায়তায় পারভেজ বাকি পাঁচ ভাইবোনকেও ছুরি ও রড দিয়ে হত্যা করেন। পরে সবার মরদেহ কম্পাউন্ডে পুঁতে দেওয়া হয় এবং প্রমাণ নষ্ট করার জন্য বাড়িটিতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
২০১২ সালের জুলাই মাসে ওই খামারবাড়ি থেকে ছয়জনের দেহাবশেষ উদ্ধার করে ক্রাইম ব্রাঞ্চ। গত ১৩ বছরে ৪০ জন সাক্ষীকে জেরা করার পর সম্প্রতি পারভেজকে দোষী সাব্যস্ত করেন আদালত।