কলকাতা: ভারতের করোনা পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলেও পশ্চিমবঙ্গে ১৫ জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকবে 'লকডাউন'। আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ কথা জানিয়েছেন। গত ১৫ মে রাজ্যের মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় ৩০ মে পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ জারি করেছিলেন। আর এদিন মুখ্যমন্ত্রী জানান, ১৫ জুন পর্যন্ত চলবে 'বিধিনিষেধ'।
রাজ্য প্রশাসনের দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ১৫ জুন পর্যন্ত লোকাল ট্রেন, ফেরি, বাস চলাচল বন্ধ থাকছে। বাজার খোলা সকাল ৭টা থেকে সকাল ১০টা পর্যন্ত। রাত ৯টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ঘরের বাইরে বের হওয়াতেও থাকবে নিষেধাজ্ঞা।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াস এখন নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। তাই প্রবল বৃষ্টি হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গ ও ওডিশার বহু এলাকা এখনো প্লাবিত। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আগামীকাল শুক্রবার দুই রাজ্য সফরে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। মমতার সঙ্গে তাঁর কলাইকুন্ডায় বৈঠকের কথা রয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬ হাজার ২২৫ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃতের সংখ্যা ১৫৩। ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা গত ২৪ ঘণ্টায় ফের ২ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যুর সংখ্যাও ৪ হাজার ছাড়িয়েছে। সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস (কালো ছত্রাক)। কলকাতায় এখন পর্যন্ত ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১৩ জন। তাই রাজ্যে রাজ্যে করোনার বিধিনিষেধ জারি রয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কলকাতাসহ গোটা রাজ্যে বিধিনিষেধ ৩০ মে থেকে বাড়িয়ে ১৫ জুন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে টিকাদান কর্মসূচিও চলবে। তিনি জানান, চলতি বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা হবে জুলাইয়ের মাঝামাঝি। আর মাধ্যমিক হবে আগস্টে। কোভিড প্রোটোকল মেনেই হবে পরীক্ষা। তবে প্রতিটি আবশ্যিক বিষয়ে পরীক্ষা হবে ৩ ঘণ্টার বদলে দেড় ঘণ্টায়। তিনি সকলকে কোভিড প্রোটোকল মেনে চলতে অনুরোধ করেন। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ইয়াস–পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেন।
ঘূর্ণিঝড়ের দাপট কমলেও নিম্নচাপের কারণে প্রবল বর্ষণ আর জোয়ারের ধাক্কায় রাজ্যের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। আজ সকালে মাত্র ৩০ সেকেন্ডের 'মিনি টর্নেডো' তছনছ করে দেয় নদীয়ার চাকদা ও উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগর।
এদিকে, কলকাতাসহ বহু জেলায় প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মুর্শিদাবাদে অন্তত দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। কলকাতায় আদিগঙ্গার পানি বেড়ে যাওয়ায় কালীঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উত্তর কলকাতার কলেজ স্ট্রিটসহ একাধিক এলাকা এখন বৃষ্টির কারণে জলমগ্ন। এদিন দুই মেদিনীপুরে জোয়ারের কারণে নতুন করে এলাকা প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
আগামীকাল শুক্রবার ইয়াস–পরবর্তী পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে ওডিশায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আকাশপথে সেখানকার বালেশ্বর, ভদ্রক, কান্দেপাড়া পরিদর্শনের পর তিনি দীঘাসহ পশ্চিমবঙ্গের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাও ঘুরে দেখবেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে যাচ্ছেন। আকাশপথে পরিদর্শনের পর কলাইকুন্ডায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠক রয়েছে। তবে পুরোটাই নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকলে প্রধানমন্ত্রী বা মুখ্যমন্ত্রীর হেলিকপ্টার উড়তে পারবে না।
তার আগে অবশ্য মমতা এদিন জানিয়েছেন, আগামী ৩ জুন থেকেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের 'দুয়ারে রেশন' চালু হচ্ছে। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে ক্ষতির পরিমাণ জরিপের কাজ। পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ কোটি রুপির ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো হয়েছে। সরকারি ত্রাণ পৌঁছানোর পাশাপাশি রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীসহ অন্যদেরও ত্রাণ বিলিতে উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছে। রাজ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচনে বামেরা কোনো আসনে জিততে না পারলেও দুর্যোগের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় তাঁদের 'রে ভলেন্টিয়ার্সরা' বিশেষ তৎপরতা দেখাচ্ছেন।
রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ এদিন সাংবাদিক সম্মেলন করে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করেন। তাঁর অভিযোগ—আম্পানের সময়ে দিল্লি থেকে পাঠানো ক্ষতিপূরণের টাকাই এখনো পাননি বহু মানুষ। তবে তাঁর অভিযোগের জবাব দিতে নারাজ তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, 'মানুষ ওদের পরিত্যাগ করেছে। তাই প্রলাপ বকে খবরে টিকে থাকতে চাইছেন দিলীপ বাবুরা।’
করোনা আর ইয়াস দুর্যোগের মধ্যেই কলকাতার উপকণ্ঠে নিফ ব্যারাকপুরে বিধ্বংসী অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে গেঞ্জি কারখানায়। প্রাথমিকভাবে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে। ১২ ঘণ্টা চেষ্টা করেও আগুন আয়ত্তে আনতে পারেনি দমকল বাহিনী।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে আজও জামিন পাননি কলকাতার পুর নিগমের প্রশাসক তথা রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাঁর সঙ্গে এখনো গৃহবন্দী মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, সাবেক মন্ত্রী মদন মিত্র ও শোভন চ্যাটার্জি। কলকাতা হাইকোর্টের পাঁচজনের ডিভিশন বেঞ্চে এদিন শুনানি চললেও কোনো সিদ্ধান্ত নেননি আদালত। আগামীকাল ফের শুনানি হবে চার হেভিওয়েটের জামিন–সংক্রান্ত এই মামলায়।