কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে ভারতের শাসক দলর বিজেপিতে বড় ভাঙন। বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি তথা সাবেক রেলমন্ত্রী মুকুল রায় আজ শুক্রবার যোগ দিলেন তাঁর পুরোনো দল তৃণমূল কংগ্রেসে। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে মুকুলের যোগদানে বিজেপি বড় ধাক্কা খেল বলে মনে করছে রাজনৈতিকমহল। মমতা জানিয়েছেন, আরও অনেকেই তৃণমূলে আসছেন। তবে ‘গাদ্দারদের’ দলে ফেরানো হবে না। মুকুল রায় জানিয়েছেন, সাড়ে তিন বছর পর পুরোনো দলে ফিরতে পেরে তিনি খুশি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বেই বাংলার পরিবর্তনের জন্য কাজ করবেন।
মমতার নেতৃত্বে তৃণমূল প্রতিষ্ঠার অন্যতম কারিগর মুকুল রায়। মমতাসহ দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতিতে আজ তৃণমূলের বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাবেক সাধারণ সম্পাদককে দলে বরণ করে নেন। মুকুলের সঙ্গেই তাঁর ছেলে, সাবেক বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়ও এদিন তৃণমূলে ফেরেন।
মুকুলের দলে ফেরা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, ‘মুকুল ঘরের ছেলে। ওকে ভয় দেখিয়ে নিয়ে গিয়েছিল বিজেপি। ও ঘরে ফিরেছে। মনে রাখবেন, ওল্ড ইজ গোল্ড।’ পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি আরও ভাঙছে, পুরোনো দলে ফিরেই ইঙ্গিত দেন মুকুল। মমতা জানিয়েছেন, দলে মুকুলকে নতুন করে দায়িত্ব দেওয়া হবে। জল্পনা চলছে, তাঁকে রাজ্যসভায় এবং ছেলেকে বিধানসভার উপনির্বাচনে প্রার্থী করবে তৃণমূল। মুকুল ছাড়াও ভারতের প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির ছেলে, সাবেক সাংসদ অভিজিৎ মুখার্জিও তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের দেড় মাসের মধ্যেই মুকুলের যোগদানে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে মুকুল বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় বহু তৃণমূল নেতা তাঁর সঙ্গে দল ছাড়েন। তবে এবার তাঁর দল বদলকে বিজেপি দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বা কেন্দ্রীয় নেতা ও মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ গুরুত্ব দিতে চাননি।
রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, দল বদলের কারণ নিয়ে তাঁরা আলোচনা করবেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের মতে, ‘যেকোনো দল বদলেরই কিছু রাজনৈতিক প্রভাব থাকে।’
বিজেপির সর্বভারতীয় সম্পাদক অনুপম হাজরা বলেন, ‘লবি বাজির কারণে অপমানের করুণ পরিণতিতেই মুকুল রায় দল ছেড়েছেন।’ আবার পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির যুব সভাপতি সৌমিত্র খাঁনের কটাক্ষ, ‘মুকুল রায় মির জাফর।’
বিজেপি সাংসদ অর্জুন সিংয়ের মতে, ‘স্বার্থের কারণেই বিজেপি ছেড়েছেন মুকুল রায়। তিনি আসলে গাদ্দার।’ সাবেক রাজ্যপাল ও বিজেপি নেতা তথাগত রায়ের প্রয়াত কমিউনিস্ট নেতা হরে কৃষ্ণ কোঙারকে উদ্ধৃত করে কটাক্ষ, ‘মল-মূত্র ত্যাগ করলে দেহের কোনো ক্ষতি হয় না।’ কংগ্রেস নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরীর কটাক্ষ, ‘কে কখন কোন দল করছে এটা লক্ষ্য রাখাই তো কঠিন। কংগ্রেসের অবশ্য এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই।’ আবার তৃণমূল নেতা সুখেন্দু শেখর রায়ের দাবি, ‘বাংলায় তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে বিজেপি।’
এদিকে, ভারতের সবচেয়ে বড় রাজ্য উত্তর প্রদেশ নিয়েও বেশ বিপাকে বিজেপি। সেখানে ব্রাহ্মণ, ঠাকুর, বৈদ্য, ওবিসি প্রভৃতি জাতপাতের লড়াইয়ে বিব্রত বিজেপি নেতারা। সামনেই সেখানে বিধানসভার ভোট। তার আগে ক্ষোভ সামলাতে ব্যস্ত বিজেপি নেতারা। আজই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্য নাথের সঙ্গে এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। পরে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডার সঙ্গেও বৈঠক করেন যোগী। জল্পনা চলছে, মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বা ক্ষমতার সমীকরণ বদলে যোগী-রাজ্যে ক্ষোভ সামাল দিতে চাইছে বিজেপি।