বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাজনিত অস্থিরতার কারণে গত বছরের মতো ভারতের ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে অপরিবর্তিত থাকছে বাংলাদেশের জন্য বরাদ্দকৃত ১২০ কোটি রুপির সহায়তা। তবে, ২০২৬ অর্থবছরে ঢাকায় জনকল্যাণমূলক নতুন কোনো প্রকল্প শুরু করার সম্ভাবনা নেই নয়াদিল্লির।
গতকাল সোমবার সংসদীয় কমিটিকে এ কথা জানিয়েছে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে ঢাকার সঙ্গে সক্রিয় যোগাযোগ রাখার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, বাংলাদেশে নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে ‘পরামর্শমূলক পদ্ধতি’ অনুসরণ করা প্রয়োজন। পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ২৭ ফেব্রুয়ারি সংসদীয় কমিটিকে জানান, এরই মধ্যে বাংলাদেশে যেসব প্রকল্প চলছে, গত কয়েক মাস ধরে তা বিলম্বিত হচ্ছে। এর কারণ দেশটিতে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর নিরাপত্তাজনিত অনিশ্চয়তা।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে মোট বরাদ্দ ২০ হাজার ৫১৬ কোটি রুপি। এর মধ্যে ৬ হাজার ৭৫০ কোটি রুপি বা ৩৩ শতাংশই বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদেশি সহায়তার জন্য, যা ঋণ, অনুদান এবং দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ব্যবহৃত হবে। এই খাতে এ বছরের বরাদ্দ গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার ৬৬৭ কোটি রুপি।
এর আগের অর্থবছরে, অর্থাৎ ২০২৩–২৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতার আশঙ্কা থেকে ঢাকার জন্য কম বাজেট বরাদ্দ করেছিল ভারত। মন্ত্রণালয় জানায়, ২০২৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে বাংলাদেশ যখন ২০২৪ সালের জানুয়ারি মাসে সাধারণ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখন পুরো প্রচারকালজুড়ে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সম্পর্কিত অস্থিরতা লক্ষ্যে করা গেছে। ২০২৪ সালের জুলাই–আগস্টেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যাঘাত ঘটেছে।
এ কারণেই বর্তমানে বাংলাদেশে নতুন আর কোনো প্রকল্প নেবে না তারা। ২০২৫–২৬ অর্থবছর নতুন যে প্রকল্পগুলো বাংলাদেশে ভারত গ্রহণ করতে চাচ্ছে না সেগুলোকে হাই ইম্প্যাক্ট কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টস—এইচআইসিডিপি বলা হচ্ছে। এই প্রকল্পগুলো মূলত গ্রামীণ অবকাঠামো, যেমন: পানীয় জলের সরবরাহ, সেচ খাল, কৃষি সড়ক, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা অবকাঠামো ইত্যাদি।
বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের সহায়তায় দুটি প্রকল্পের কাজ চলমান। যেগুলোর একটি হলো—বাংলাদেশ–ভারত ডিজিটাল সার্ভিস ও এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ। অন্যটি ‘একাডেমি ফর অ্যা বেটার ওয়ার্ল্ড’–এর জন্য একটি বহুতল ভবন নির্মাণ। এই দুটি প্রকল্পের কাজ চলতি বছর মে মাসেই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
দুই দেশের অন্যতম বড় একটি প্রকল্প ভারত ও বাংলাদেশ সংযোগকারী আখাউড়া–আগরতলা রেল প্রকল্প। এরই মধ্যে শেষ হয়েছে এর নির্মাণকাজ। বর্তমানে পর্যবেক্ষণে রয়েছে প্রকল্পটি, ২০২৫ সালের জুনে শেষ হবে এটির ‘ডিফেক্ট লায়াবিলিটি স্টেজ’।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক বজায় রাখতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যোগাযোগ ধরে রাখতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি, যাতে ঢাকায় নয়াদিল্লির প্রকল্পগুলো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।