ভারতের পতাকায় প্রণাম করলে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবেন শিলিগুড়ির ডাক্তার

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ২২: ০৪
শিখর বন্দোপাধ্যায়ের চেম্বারে ঝুলান জাতীয় পতাকা ও এর পাশে লেখা বার্তা। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগে প্রতিবেশী দেশটিতে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে কোনো চিকিৎসক ও হাসপাতাল। বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের এক চিকিৎসক বলেছেন, ভারতের পতাকায় প্রণাম করলে বাংলাদেশিদের চিকিৎসা দেবেন তিনি।

গত সোমবার ঢাকার বিমানবন্দরে সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তার এবং পরদিন তাঁকে আদালতে হাজির করার পর চট্টগ্রামে সহিংসতায় আইনজীবীর প্রাণহানির পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়ে। দুই দেশেই পরস্পরের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ উঠেছে।

এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাসপাতাল ও চেম্বারে বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা আসছে। সর্বপ্রথম কলকাতার জে এন রায় হাসপাতাল এবং সর্বশেষ ত্রিপুরার আগরতলার আইএলএস হাসপাতাল এ ঘোষণা দেয়।

তবে পশ্চিমবঙ্গের শিলিগুড়ির এক চিকিৎসক বলেছেন, তিনি বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু এর আগে ভারতীয় পতাকায় প্রণাম করে তাঁর চেম্বারে প্রবেশ করতে হবে।

শিখর বন্দ্যোপাধ্যায় নামের এই চিকিৎসক পশ্চিমবঙ্গের নর্থবেঙ্গল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইএনটি (নাক-কান-গলা) বিভাগের স্পেশাল মেডিকেল অফিসার। তিনি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ আমাদের পতাকাকে অবমাননা করেছে। এই বিষয়টি আমাকে কষ্ট দিয়েছে। তবে আমি রোগীদের ফিরিয়ে দিতে চাই না। যাঁরা আমাদের দেশে চিকিৎসার জন্য আসবেন, তাঁদের আমাদের পতাকা এবং আমাদের দেশের প্রতি সম্মান জানাতে হবে।’

এই চিকিৎসক আরও বলেছেন, ‘আমি একটি সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। সেখানে কোনো রোগীকে চিকিৎসা না দিয়ে ফেরাতে পারব না। কিন্তু শিলিগুড়িতে আমার ব্যক্তিগত চেম্বারে আমি জাতীয় পতাকা ঝুলিয়েছি। এর পাশে একটি বার্তাও লিখে দিয়েছি। যাঁরা আমাদের দেশের পতাকাকে সম্মান জানাবেন না, তাঁরা আমার কাছ থেকে চিকিৎসাও পাবেন না।’

ডা. শিখর তাঁর চেম্বারে রাখা পতাকার পাশে লিখে দিয়েছেন, ‘ভারতবর্ষের জাতীয় পতাকা আমাদের মাতৃসম। এই পতাকাকে প্রণাম করে চেম্বারে প্রবেশ করবেন। বিশেষত বাংলাদেশ থেকে আগত রোগীরা প্রণাম না করলে এখানে রোগী দেখা হবে না।’

চন্দ্রনাথ অধিকারী নামের আরেক চিকিৎসক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, তিনিও সরকারি হাসপাতালে কাজ করেন। সেখানে সবাইকে চিকিৎসা দেবেন। কিন্তু নিজের ব্যক্তিগত চেম্বারে কোনো বাংলাদেশি রোগীকে দেখবেন না।

তবে পশ্চিমবঙ্গ মেডিকেল কাউন্সিল (ডব্লিউবিএমসি) বাংলাদেশি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া বন্ধের বিষয়টিকে সমর্থন করেনি। ডব্লিউবিএমসির সভাপতি ড. সুদীপ্ত রায় বলেছেন, তাঁরা রোগীদের মধ্যে কোনো বৈষম্য করেন না। সবার চিকিৎসা করবেন।

নারায়ণা হেলথের এক প্রতিনিধি জানান, ভিসা সমস্যা ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভারতে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা অনেক কমে গেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা ১৮০–২০০ থেকে ৬০–এ নেমে এসেছে। ভিসা দেওয়া বন্ধ থাকায় আগামী সপ্তাহগুলোতে আরও কমতে পারে।’

বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা ভারতের পর্যটন খাতকেও প্রভাবিত করেছে। গত ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতন এবং তাঁর ভারতে চলে যাওয়ার পর থেকে দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্কের জটিলতা বাড়তে থাকে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়া সাময়িক বন্ধ রাখে ভারত। এর পর থেকে দেশটিতে বাংলাদেশি রোগী ও পর্যটকের সংখ্যা কমতে থাকে।

টেলিগ্রাফ ইন্ডিয়ার প্রতিবেদন

ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ ইস্যুতে বাংলাদেশের ‘নরম সুর’

কেন্দ্রের ষড়যন্ত্রে অবৈধ বাংলাদেশিদের পশ্চিমবঙ্গে ঢোকাচ্ছে বিএসএফ: মমতা

বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে বিজেপি সরকারের প্রতি তৃণমূলের আহ্বান

ভারতে ৮ পাকিস্তানির ২০ বছর করে কারাদণ্ড