ভারতের আসাম রাজ্যের বাঙালি অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অসমিয়া পড়ানোর সুপারিশ করেছে সেখানকার বিধানসভা প্রতিনিধিরা। কিন্তু সেই প্রস্তাবের তীব্র বিরোধিতা শুরু হয়েছে।
জানা যায়, আসাম বিধানসভার বিধায়ক পরমানন্দ রাজবংশীর নেতৃত্বাধীন একটি কমিটি বরাকের তিন জেলা সফর করে সেখানে প্রাথমিক স্তরে প্রতিটি বিদ্যালয়ে অসমিয়া পড়ানো বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব দেন। পরমানন্দের প্রস্তাব মতো আগামী বছর থেকেই বরাকের প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বাচ্চাদের অসমিয়া পড়তে হবে। এরই মধ্যে অবশ্য বহু স্কুলেই ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে অসমিয়া পড়ানো হচ্ছে।
তবে বরাকে অসমিয়া ভাষা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে। আসামের নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমন্বয় সমিতি (সিআরপিসিসি) এই সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছে।
সিআরপিসিসির কো-চেয়ারম্যান সাধন পুরকায়স্থের মতে, বাঙালিবিদ্বেষ থেকেই অসমিয়া চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই অসমিয়া অধ্যুষিত এলাকায় বাংলা পড়ানো বাধ্যতামূলক না করে বরাকে পড়ানো হচ্ছে অসমিয়া।
এর পেছনে উগ্র অসমিয়া আধিপত্যবাদ কাজ করছে বলে মনে করেন আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপোধীর ভট্টাচার্য। তাঁর মতে, ভাষা শিক্ষায় আপাতদৃষ্টিতে কোনো আপত্তি নেই। তবে এর পেছনে রয়েছে বাঙালিবিদ্বেষ।
অসমীয়া ভাষাকে উপত্যকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ৫০ শতাংশ অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব অসম সরকারের উগ্র-প্রাদেশিকতাবাদী শক্তির ধারাবাহিক আগ্রাসনের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে সিআরপিসিসি। বহুভাষিক আসামে বহুবার বিভিন্ন ভাষার ওপর অসমিয়া আধিপত্যবাদের প্রভাব পড়েছে। আসাম টুকরো টুকরোও হয়েছে ভাষাগত কারণে। বরাকের মানুষ বাংলা ভাষার জন্য ১৯৬১,১৯৭২, ১৯৮৬ সালে জীবন দিয়েছে।
১৯৬১ সালের ১৯ মে বরাকের শিলচরে বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠা আন্দোলনে ১১ জন শহীদ হন। তাই সিআরপিসিসি 'প্রভুত্ববাদী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাষা-গণতন্ত্রের মৌলিক নীতির ওপর আঘাতের বিরোধিতা করছে।' সিআরপিসিসি নেতা-কর্মীদের মতে, দীর্ঘদিন ধরে বরাকে বসবাসকারী অসমীয়াদের জন্য স্কুল রয়েছে। আরও নতুন স্কুল তৈরি করা হোক। কিন্তু বাঙালির অধিকার খর্ব করা চলবে না। অসমিয়া আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে সুসংহত লড়াইয়ের ডাক দেন তাঁরা।