Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > ভারত

সাপে ভরা জঙ্গলে সেদিন সুনামিকে জন্ম দিয়েছিলেন নমিতা

অনলাইন ডেস্ক    

সাপে ভরা জঙ্গলে সেদিন সুনামিকে জন্ম দিয়েছিলেন নমিতা
ছেলে সুনামির সঙ্গে নমিতা রায়। ছবি: পিটিআই

২০০৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ছিল পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়ংকরতম সেই দিন, যেদিন ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর সুনামির ঢেউ আন্দামান ও নিকোবরের হাট বে দ্বীপ গ্রাস করেছিল। এই দ্বীপেই ছিল নমিতা রায়ের বাড়ি। তাঁর বয়স তখন ২৬ বছর।

সুনামিতে বাড়িটি বিধ্বস্ত হলে সাপ উপদ্রুত একটি জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছিলেন নমিতা। আর এমন অস্বাভাবিক এবং কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেই সেখানে তিনি তাঁর ছোট ছেলের জন্ম দিয়েছিলেন। পরে এই ছেলের নামও রাখা হয়—সুনামি।

২০ বছর পরও সেই দিনের স্মৃতি এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় নমিতাকে। ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে তিনি বলেন, ‘আমি সেই অন্ধকার দিনটি মনে করতে চাই না। আমি গর্ভবতী অবস্থায় দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত ছিলাম। হঠাৎ দেখি অদ্ভুত এক নীরবতা, আর দেখলাম সমুদ্র আমাদের উপকূল থেকে মাইলের পর মাইল দূরে সরে গেছে। পাখিদের অস্থির আচরণও আমাদের চোখে পড়েছিল।’

কাঁদতে কাঁদতে নমিতা বলতে থাকেন—‘কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে একটি ভীতিকর ফিসফিসানি শব্দ শোনা গেল। আমি দেখলাম, বিশাল এক সুনামি ঢেউ হাট বে দ্বীপের দিকে ধেয়ে আসছে, আর মাটিও তখন কাঁপছিল। মানুষ ভয়ে চিৎকার করতে করতে একটি টিলার দিকে দৌড়াচ্ছিল। কিন্তু ভয়ে আমি সংজ্ঞা হারালাম।

‘ঘণ্টা কয়েক পরে জ্ঞান ফেরার পর দেখি, আমি গভীর জঙ্গলে স্থানীয় আরও অনেক মানুষের সঙ্গে আছি। সেখানে স্বামী এবং বড় ছেলেকে দেখে কিছুটা স্বস্তি পেলাম। আমাদের দ্বীপের বেশির ভাগ অংশই সুনামির ঢেউয়ে ধ্বংস হয়ে যায়। প্রায় সব সম্পত্তি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।’

বর্তমানে নমিতা পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে তাঁর দুই ছেলে সৌরভ এবং সুনামিকে নিয়ে বসবাস করেন। তাঁর স্বামী লক্ষ্মীনারায়ণ ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময় মারা যান।

জঙ্গলের মধ্যে ছেলেকে জন্ম দেওয়ার স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘রাতে ১১টা ৪৯ মিনিটে প্রসব বেদনা শুরু হলো। কিন্তু আশপাশে কোনো ডাক্তার নাই। একটা পাথরের ওপর শুয়ে কাতরাতে থাকলাম। আমার স্বামী অনেক চেষ্টা করেও কোনো উপায় করতে পারেননি। অবশেষে জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া কয়েকজন নারীর সহায়তায় আমি সুনামির জন্ম দিই। সেই সময় পরিস্থিতি ছিল অত্যন্ত ভয়াবহ। সাপে ভরা ছিল জঙ্গলটি।’

নমিতা জানান, জঙ্গলের মধ্যে কোনো খাবার ছিল না। আর সমুদ্রের ভয় তখন এতটাই জেঁকে বসেছিল যে তিনি জঙ্গল ছেড়ে বের হওয়ার সাহসই পাইনি। এর মধ্যেই অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করেছিল। কোনোভাবে তিনি তাঁর অপরিণত নবজাতককে বুকের দুধ পান করিয়ে বাঁচিয়ে রাখেন। আর জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া সবাই তখন মূলত নারকেলের পানি পান করেই বেঁচে ছিলেন।

নমিতা বলেন, ‘আমরা হাট বে-র লাল টিকরি পাহাড়ে চার রাত কাটাই। পরে সেনাবাহিনী আমাদের উদ্ধার করে। আমাকে চিকিৎসার জন্য একটি জাহাজে করে পোর্ট ব্লেয়ারের জিবি প্যান্ট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।’

হাট বে দ্বীপ থেকে পোর্ট ব্লেয়ার থেকে প্রায় ১১৭ কিমি দূরে অবস্থিত। এই পথটুকু জাহাজে পাড়ি দিতে আট ঘণ্টা সময় লাগে।

নমিতার বড় ছেলে সৌরভ বর্তমানে একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানিতে কাজ করেন। আর ছোট ছেলে সুনামি চান একজন মহাসাগর বিশেষজ্ঞ হতে, যেন তিনি আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসনের জন্য কাজ করতে পারেন।

সুনামি রায় বলেন, ‘আমার মা-ই আমার সব। তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষ। বাবা মারা যাওয়ার পর তিনি আমাদের খাওয়ানোর জন্য সংগ্রাম করেছেন এবং সুনামি-কিচেন নামে একটি খাবার সরবরাহের ব্যবসা শুরু করেছেন।’

আন্দামান ও নিকোবর প্রশাসনের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ২০০৪ সালের ভয়াবহ সুনামিতে প্রাণহানি এবং ক্ষয়ক্ষতি অনেকটাই এড়ানো যেত, যদি কার্যকরী সতর্কীকরণ ব্যবস্থা থাকত। তিনি বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ১ হাজার ৪০০ টির বেশি সুনামি সতর্কীকরণ কেন্দ্র রয়েছে। আমরা এমন পরিস্থিতি সামলাতে পুরোপুরি প্রস্তুত।’

মাকে মারধর করে রক্ত পানের হুমকি মেয়ের

উত্তরাখন্ডে তুষারধসে চাপা পড়ে ৪ শ্রমিকের মৃত্যু

ভারতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে, খবর তৈরির প্রয়োজন নেই: মোদি

বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারতে কোনো মামলা করেনি সংগঠন, ইসকনের বিবৃতি

ভাইরাল হতে ট্রেনের জানালা দিয়ে যাত্রীকে থাপ্পড়, আটক কনটেন্ট ক্রিয়েটর

উত্তরাখন্ডে তুষারধসে আটকা ৪১ শ্রমিক

বিহার বাদ দিলে ভারত উন্নত দেশ হতো—মন্তব্য করায় বরখাস্ত স্কুল শিক্ষিকা

গঙ্গার ঘাটে স্যুটকেস খুলতেই মিলল নারীর মরদেহ

ব্যক্তিগত শখ পূরণের টাকা নেই ১০০ কোটি ভারতীয়র

বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে ইসকন নেতার আবেদন ভারতের সুপ্রিম কোর্টে খারিজ