ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গাজার রাফাহ থেকে ফিলাডেলফি করিডরের দিকে তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। হামাসের বরাত দিয়ে বেশ কয়েকটি স্থানীয় জানায় গণমাধ্যম রোববার ভোরে এ তথ্য জানিয়েছে। সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় (বাংলাদেশ সময় সাড়ে ১২ টা) যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে যাচ্ছে। মিসর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কয়েক মাসের ধারাবাহিক আলোচনার পর এই চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। যার ফলে গাজায় ১৫ মাস ধরে চলা ইসরায়েলি আগ্রাসন শেষ হতে যাচ্ছে।
এই যুদ্ধবিরতি তিনটি ধাপে সম্পন্ন হবে। প্রথম ধাপটি শুরু হবে রোববার। প্রথম পর্যায়ের জন্য নির্ধারিত ছয় সপ্তাহে হামাসের হাতে জিম্মি ৯৮ জনের মধ্য থেকে ৩৩ জনকে মুক্তি দেওয়া হবে। এই তালিকায় নারী, শিশু এবং ৫০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষ, অসুস্থ ও আহতদের মুক্তি দেওয়া হবে। বিনিময়ে প্রায় ২ হাজার ফিলিস্তিনি বন্দী ও আটক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তি অনুসারে, আজ রোববার দুপুরে তিন নারী জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিপরীতে ৩০ জন ফিলিস্তিন বন্দীকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল।
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে আলোচনায় নেতৃত্ব দেওয়া ব্রেট ম্যাকগার্ক বলেন, চুক্তি অনুসারে সাত দিন পর আরও ৪ নারী জিম্মি মুক্তি পাবে, এরপর প্রতি সাত দিনে আরও ৩ জন করে জিম্মি মুক্তি পাবেন।
প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার কিছু এলাকা থেকে সরে যাবে এবং গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে উদ্বাস্তু ফিলিস্তিনিরা নিজ এলাকায় ফিরতে পারবেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের টিম এই চুক্তি বাস্তবায়নে ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে, তা স্পষ্ট নয়। গাজা পুনর্গঠনে বহু কোটি ডলার এবং বছরের পর বছর কাজের প্রয়োজন হবে। যুদ্ধবিরতির উদ্দেশ্য পুরো যুদ্ধ শেষ করা হলেও এটি সহজেই ভেস্তে যেতে পারে—এমন আশঙ্কাও আছে।
এর আগে, যুদ্ধবিরতি প্রসঙ্গে কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার এক পোস্টে বলেন, ‘চুক্তির পক্ষগুলো এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে।’ গাজাবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সতর্ক থাকুন, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কেবল সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া নির্দেশনার অপেক্ষা করুন।’
এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যেকোনো নারী বা শিশু বন্দীকে মুক্তি দিলে, প্রতি বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দীর বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে।
এ ছাড়া, একজন নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরবর্তীতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।
তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসেবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না।