Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১ বছরে যুদ্ধ ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও

অনলাইন ডেস্ক

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের ১ বছরে যুদ্ধ ও উত্তেজনা ছড়িয়েছে মধ্যপ্রাচ্যেও

ফিলিস্তিনে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল এক বছর আগে, ধীরে ধীরে তা বিস্তৃতি লাভ করছে। গত শনিবার রাতে ইসরায়েলের ভয়ংকর হামলার সাক্ষী হলো লেবানন। এদিকে গাজায়ও হামলা এখনো চলছে। এরই মধ্যে সিরিয়ায় ইরানের কনস্যুলেটে হামলা, তেহরানে অভিযান চালিয়ে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াকে হত্যা করেছে ইসরায়েল। পাল্টা জবাবে ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। 

গাজায় হামলার প্রতিবাদে হামাসের সমর্থনে লোহিতসাগর ও ইসরায়েলে মাঝেমধ্যেই হামলা চালাচ্ছে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা। তাদের দমনে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশের বাহিনী। সম্প্রতি সিরিয়ায়ও হামলা শুরু করেছে ইসরায়েল। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ইসরায়েল শুরু করেছিল, সেই যুদ্ধকে ঘিরে অশান্ত হয়ে উঠেছে পুরো মধ্যপ্রাচ্য। এই পরিস্থিতিতে লেবানন ও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবিতে বিভিন্ন দেশে গতকাল রোববার বিক্ষোভ হয়েছে। 

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস গত বছরের ৭ অক্টোবর হঠাৎই ইসরায়েলে হামলা চালায়। এই হামলায় ১ হাজারের বেশি ইসরায়েলি নিহত হয়। আর হামাসের হাতে জিম্মি হয় ২০০ ইসরায়েলি। ওই দিনই হামাস নির্মূলের ঘোষণা দিয়ে গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। সেই অভিযান এখনো চলছে। আর এই যুদ্ধ চলাকালে এমন কোনো দিন নেই যে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হাতে ফিলিস্তিনি নিহত হয়নি। 

গতকাল রোববার গাজার জাবালিয়া এলাকায় বিমান হামলা চালায় আইডিএফ। এতে ৯ শিশুসহ ১৭ জন নিহত হয়। এ ছাড়া দেইর আল-বালাহ এলাকায় একটি মসজিদ ও একটি স্কুলে হামলায় ২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪৫ জন নিহত হয়েছে। 

এ নিয়ে ৪১ হাজার ৮৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আর ৯৭ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছে। এর জবাবে পাল্টা হামলার শিকার হয়েছে ইসরায়েল। দেশটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গাজার উত্তরাঞ্চল থেকে ইসরায়েলে রকেট হামলা হয়েছে। এই হামলায় হতাহতের ঘটনা জানা যায়নি। 

ইসরায়েলে বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরে গত শনিবার এক ভিডিও বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, গাজায় হামলা শুরুর এক বছরের মাথায় ইসরায়েল এখন সাতটি ফ্রন্টে লড়াই করছে। তিনি বলেন, ‘ইসরায়েল এখন সভ্যতার শত্রুদের বিরুদ্ধে সাতটি ফ্রন্টে আত্মরক্ষা করছে। এর মধ্যে রয়েছে উত্তরে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ, গাজার হামাস, ইয়েমেনের হুতি, পশ্চিম তীরে সন্ত্রাসী এবং ইরাক ও সিরিয়ার শিয়া মিলিশিয়ারা। আর এই সব ফ্রন্টের নেপথ্যে রয়েছে ইরান। গত সপ্তাহে তারা সরাসরি ইসরায়েলে ২০০ টির বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি।’ 

বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, ইরান যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তাদের ভূখণ্ড ও জনগণের ওপর এই মাত্রার হামলা বরদাশত করবে না, ইসরায়েলও না। নিজের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু অধিকারই নয়, বরং এটি ইসরায়েলের দায়িত্ব। নিশ্চিতভাবেই সেই দায়িত্ব পালন করা হবে। 

ইসরায়েলি হামলার হুমকির মধ্যেই দেশের দক্ষিণাঞ্চলীয় তেল স্থাপনাগুলো পরিদর্শন করেছেন ইরানের তেলমন্ত্রী মোহসেন পাকনেজাদ। গত শনিবার পাকনেজাদ বুশেহর প্রদেশের আসুলিয়ে অঞ্চলের বিভিন্ন তেল স্থাপনা পরিদর্শন করেন তিনি। তবে তাঁর দাবি, ‘ইরানের তেল ও গ্যাসক্ষেত্রে ইসরায়েল হামলা চালাবে বলে যে হুমকি দিয়েছে, তার সঙ্গে এই সফরের কোনো সম্পর্ক নেই। শত্রুর হুমকি নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই। এই সফর স্বাভাবিক কার্যক্রমের অংশ।’ 

লেবাননে শনিবার রাতভর বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে ইসরায়েলি বিমান হামলার বর্ণনা দিতে গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ পরপর বিকট শব্দে কেঁপে উঠছিল পুরো এলাকা। বৈরুতের দক্ষিণের শহরতলির সাবরাতের সড়কে প্রাণভয়ে বহু মানুষকে পালাতে দেখেছেন এএফপির প্রতিবেদক। তাদের কারও হাতে ব্যাগ, কেউ মোটরসাইকেলে, কেউ হেঁটে চলছে। বৈরুতে লেবাননের একমাত্র বিমানবন্দরের কাছেও বোমা হামলা চালানো হয়েছে। গতকাল রোববারও আক্রান্ত হয় বিভিন্ন এলাকা। 

আইডিএফের মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে স্থল অভিযানে তারা ৪৪০ হিজবুল্লাহ যোদ্ধাকে হত্যা করেছে। এ ছাড়া হিজবুল্লাহর নিয়ন্ত্রণে থাকা প্রায় ২ হাজার লক্ষ্যবস্তু গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 

গতকাল লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আগের দিন শনিবার দেশটিতে হামলা চালিয়ে অন্তত ২৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এ ছাড়া আহত হয়েছে কমপক্ষে ৯৩ জন। নাবাতিহ, বেকা, বালবেক, মাউন্ট লেবাননসহ দক্ষিণ ও উত্তর লেবাননের বিভিন্ন এলাকায় চালানো হামলায় হতাহত হয়েছে তারা। 

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে লেবাননে প্রচণ্ড বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল। লেবাননের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এসব হামলায় অন্তত ২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৬১ জন নারী ও ১২৭টি শিশু রয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে ১০ লাখের বেশি মানুষ। 

ফিলিস্তিনের যুদ্ধবিরতির দাবিতে গতকাল মরক্কোয় বিশাল জমায়েত হয়েছে। গতকাল লাখো মানুষ এই বিক্ষোভে অংশ নেন। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের লন্ডনেও গতকাল ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। এই বিক্ষোভ থেকেও যুদ্ধবিরতির দাবি উঠেছে। 

এদিকে গাজা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে গতকাল জার্মানিতে যেমন বিক্ষোভ হয়েছে। তেমনি ইসরায়েলের পক্ষেও সেখানে বিক্ষোভ হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ গতকাল যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, এটা কখনোই হবে না যে জার্মানিতে ইহুদি নাগরিকদের ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হবে। একই সঙ্গে ইসরায়েলে প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।

গাজা পুনর্গঠনে ৫৩০০ কোটি ডলারের পরিকল্পনা: সমর্থন জাতিসংঘের, ইসরায়েলের প্রত্যাখ্যান

হুতিদের ফের ‘সন্ত্রাসী’ তালিকাভুক্ত করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজা পুনর্গঠনে ট্রাম্পের বিকল্প প্রস্তাবে সম্মত আরব বিশ্ব, ব্যয় ৫৩০০ কোটি ডলার

রোজার মধ্যেও গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ২, পানি–বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ

হামাস নয়, গাজা শাসন করবে ‘আন্তর্জাতিক প্রশাসন’, আরও যা আছে প্রস্তাবে

সংযুক্ত আরব আমিরাতে ভারতীয় নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর

গাজা পুনর্গঠনে জরুরি বৈঠকে বসছে আরব দেশগুলো

গাজাবাসীদের মিসরের সিনাইয়ে পাঠানোর প্রস্তাব ইসরায়েলি আইনপ্রণেতার

অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনায় সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র তৈরি করছে সিরিয়া

গাজায় রমজান: ধ্বংসস্তূপের মাঝে বিশ্বাসে অবিচল