পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা কাটাতে ইরান ও রাশিয়ার কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছে চীন। আজ শুক্রবার বেইজিংয়ে এই বৈঠক হয়েছে বলে জানা গেছে। বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইরানের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাজেম গারিবাবাদি ও রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভের সঙ্গে বৈঠক করেছে বেইজিং। বৈঠকে তেহরানের ওপর আরোপিত ‘অবৈধ’ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানায় চীন।
দুই দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি বলেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এই আলোচনা আমাদের জন্য একটি বড় সফলতা। বর্তমান পরিস্থিতি আবারও সংকটময় মুহূর্তে পৌঁছেছে। তবে শান্তির জন্য সময় দিতে হবে। রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে বিরোধ নিষ্পত্তি করতে হবে এবং শক্তি প্রয়োগ ও অবৈধ নিষেধাজ্ঞার বিরোধিতা করতে হবে।’
অন্যদিকে গারিবাবাদি বেইজিংয়ের এই আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বরাবরই শান্তিপূর্ণ ছিল। আমাদের পরমাণু কর্মসূচি কখনোই অশান্তির উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়নি।’
গারিবাবাদি অভিযোগ করে বলেন, ‘কিছু দেশ আমাদের পরমাণু কর্মসূচির ব্যাপারে সংকট তৈরির চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতির মূলে যুক্তরাষ্ট্র। একতরফাভাবে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার কারণে এ সংকট সৃষ্টি হয়েছে।’
এর আগে রাশিয়া ও ইরানের কর্মকর্তারা চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মা ঝাওসুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বৈঠকে তিন দেশ ইরানের পরমাণু ইস্যু ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে মতবিনিময় করে।
বৈঠকের পর মা ঝাওসু সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি চীনের পক্ষ থেকে ইরানের পরমাণু ইস্যুতে ‘পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পৃক্ততা এবং সংলাপের’ প্রতি সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেন।
মা ঝাওসু বলেন, ‘আমরা সব অবৈধ ও একতরফা নিষেধাজ্ঞা অবসানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছি। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে পারস্পরিক নিষেধাজ্ঞা, চাপ ও শক্তি প্রয়োগের হুমকি পরিত্যাগ করে কাজ করা উচিত।’
ইরানের রাষ্ট্রদূত জানান, চীন-রাশিয়ার সঙ্গে একটি ‘সফল’ বৈঠক হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ইস্যুতে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি হয়েছে। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আরোপিত নিষেধাজ্ঞা মোকাবিলায় তিন দেশের সহযোগিতার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি। কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর প্রথম মেয়াদে এই পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। ওই চুক্তির মাধ্যমে তেহরানের পরমাণু কর্মসূচির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়েছিল।
গত মাসে জাতিসংঘের পরমাণু নজরদারি সংস্থা জানায়, ইরান ইউরেনিয়ামের মজুত বাড়িয়েছে। এরপরই পশ্চিমাদের কাছে নতুন চুক্তি করার বিষয়টি জরুরি হয়ে পড়ে।