দক্ষিণ গাজায় ত্রাণসামগ্রী যেন বেশি পরিমাণে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্য আক্রমণে ‘কৌশলগত বিরতি’ ঘোষণা করেছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিনই ১১ ঘণ্টা আক্রমণ বন্ধ রাখার কথা জানিয়েছে তারা। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
রাফাহে স্থানীয় সময় সকাল ৮টা থেকে শুরু হয়ে এই কৌশলগত বিরতি সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত চলবে বলে জানিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী।
গাজায় মানবেতর জীবনযাপন করা কয়েক লাখ মানুষের জন্য আসা ত্রাণবাহী ট্রাকগুলো যেন সহায়তা প্রবেশের প্রধান পথ ইসরায়েল নিয়ন্ত্রিত কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ঢুকে সালাহ আ-দিন মহাসড়ক হয়ে উত্তর থেকে দক্ষিণে নিরাপদে গিয়ে গাজার বিভিন্ন অংশে পৌঁছাতে পারে, সে লক্ষ্যেই ঘোষিত হয়েছে এই বিরতি।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, এই বিরতি জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে ঘোষিত হয়েছে।
গত মে মাসের শুরুতে ইসরায়েলি স্থল সেনারা রাফাহ শহরে প্রবেশের পর থেকে কেরেম শালোম ক্রসিং দিয়ে ত্রাণ পৌঁছানো বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর আট মাস ধরে চলা গণহত্যায় অঞ্চলটির কয়েক লাখ মানুষ রয়েছে দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও বেসামরিকদের ক্ষুধা ও দুর্দশা নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের প্রতি চাপ প্রয়োগ করে যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক দপ্তরের (ওসিএইচএ) পরিসংখ্যান অনুসারে, ৬ মে থেকে ৬ জুন পর্যন্ত গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণকর্মীরা প্রতিদিন গড়ে ৬৮ ট্রাক সাহায্য পেয়েছে। এপ্রিলেও প্রতিদিন গড়ে ১৬৮টি ত্রাণবাহী ট্রাক আসত গাজায়। সহায়তাদানকারী সংস্থাগুলো বলেছিল, প্রতিদিন গাজায় অন্তত ৫০০ ট্রাক ত্রাণ দরকার। সে হিসেবে এপ্রিল মাসে গাজায় ত্রাণের পরিমাণ ছিল অপ্রতুল। আর, মে থেকে জুন পর্যন্ত ত্রাণের পরিমাণ কেবলই কমেছে।
মানবিক সহায়তার প্রয়োজন বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে দক্ষিণ গাজায় সাহায্যের প্রবাহ উল্টো হ্রাস পেয়েছে। ইতিমধ্যে বাস্তুচ্যুত হয়েছে ১০ লাখেরও বেশি ফিলিস্তিনি। ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের পর রাফাহ ছেড়ে দক্ষিণ ও মধ্য গাজার অন্যান্য অংশে ভিড় করেছে তারা। বেশির ভাগ গাজাবাসীই এখন বাস করছে জীর্ণ তাঁবুতে। তাদের সামনে রাস্তার খোলা নর্দমা। মাটিতে গর্ত করে তা শৌচাগার হিসেবে ব্যবহারে বাধ্য হচ্ছে তারা।
এদিকে, গাজা শহরের উপকণ্ঠের বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলায় আরও অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনই মধ্য গাজার এবং বাকি চারজন দক্ষিণে রাফাহের বাসিন্দা। সব মিলিয়ে গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার ৩০০ এবং এই সময়ে আহত হয়েছে আরও অন্তত ৮৬ হাজার ফিলিস্তিনি।