নিহত আইএসআইএস নেতা আবু বকর আল বাগদাদির স্ত্রীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ইরাকের একটি আদালত। বুধবার বাগদাদের আল-কারখ অপরাধ আদালতে তাঁর বিরুদ্ধে আইএস বাহিনীর সঙ্গে কাজ করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই রায় প্রদান করা হয়।
আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে আমিরাত-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনাল জানিয়েছে, বাগদাদির বেশ কয়েকজন স্ত্রীর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত ওই স্ত্রীর নাম আসমা ফৌজি মোহাম্মাদ। তিনি উম্মে হুদাইফা নামেও পরিচিত।
আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে নিনেভা প্রদেশের পশ্চিমে অবস্থিত শিঞ্জর অঞ্চল এবং এর আশপাশের গ্রামগুলোকে দখল করে নিয়েছিল আইএস সৈন্যরা। এ সময় তারা হাজার হাজার ইয়াজিদিকে হত্যা এবং বন্দী করেছিল। অসংখ্য ইয়াজিদি মেয়ে ও নারীকে তারা জোর করে যৌনদাসী হতে বাধ্য করেছিল। আর শিঞ্জর অঞ্চল থেকে আইএস সেনাদের অপহরণ করে আনা ইয়াজিদি নারীদের নিজের বাড়িতে আটকে রেখেছিলেন উম্মে হুদাইফা।
২০১৪ সাল থেকে ইরাক এবং সিরিয়ার বিশাল অঞ্চল দখলে নেওয়া আইএস বাহিনীর স্বঘোষিত খলিফা ছিলেন আবু বকর আল-বাগদাদি। সে সময় তাঁকে ধরিয়ে দেওয়ার জন্য আড়াই কোটি ডলার পুরস্কার ঘোষণা করেছিল যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র রাষ্ট্রগুলো। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, সিরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বিশেষ বাহিনীর অভিযানের সময় বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন বাগদাদি।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত উম্মে হুদাইফা ১৯৭৬ সালে ইরাকের একটি রক্ষণশীল পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। গত মে মাসে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে হুদাইফা জানিয়েছিলেন, ১৯৯৯ সালে তিনি বাগদাদিকে বিয়ে করেছিলেন। বাগদাদির আসল নাম ইব্রাহিম আওয়াদ আল বদ্রি বলেও উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
হুদাইফা আরও দাবি করেছিলেন, বিয়ের সময় বাগদাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে শরিয়া বা ইসলামিক আইন বিষয়ে অধ্যয়ন শেষ করেছিলেন বাগদাদি। সে সময় তিনি একজন ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি হলেও চরমপন্থী ছিলেন না। বাগদাদিকে একই সঙ্গে ‘রক্ষণশীল’ কিন্তু ‘উন্মুক্ত মনের মানুষ’ বলেছিলেন তিনি।
ইরাক এবং সিরিয়ার নিয়ন্ত্রণাধীন অঞ্চলগুলোতে আইএস যখন খিলাফত ঘোষণা করে উম্মে হুদাইফা তখন সিরিয়ার রাক্কা শহরে ছিলেন। এই শহরটিকে খিলাফতের রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করত সন্ত্রাসী বাহিনীটি। তবে এই বাহিনী ইরাকে পরাজিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে তুরস্কে গ্রেপ্তার হন হুদাইফা। পরে একই বছরে তাঁকে ইরাকে ফেরত পাঠানো হয়।
সম্প্রতি উম্মে হুদাইফার বিরুদ্ধে মামলা করে একটি ইয়াজিদি পরিবার। অপহরণ করে আনা ইয়াজিদি নারীদের আটকে রেখে যৌন দাসত্বে বাধ্য করার জন্য অভিযুক্ত করা হয় তাঁকে।
বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হুদাইফা স্বীকার করেছিলেন, ২০১৪ সালে তাঁর স্বামী বাগদাদি ৯ জন ইয়াজিদি মেয়ে ও নারীকে নিয়ে রাক্কার বাড়িতে এসেছিলেন। ইয়াজিদি ওই মেয়ে ও নারীদের বয়স ছিল ৯ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তাঁদের মধ্যে দুজনকে অন্যত্র পাঠিয়ে দেওয়ার আগে দুই মাস নিজের কাছে রেখেছিলেন বলেও জানিয়েছিলেন হুদাইফা। তবে আইএআইএসের সঙ্গে কোনো নৃশংস কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার বিষয়টি তিনি বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন।