অনলাইন ডেস্ক
গাজায় ত্রাণসহায়তা পাঠানোর পরিবর্তে হিরোশিমা ও নাগাসাকির মতো বোমা ফেলে সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের রিপাবলিকান পার্টির এক কংগ্রেসম্যান। সম্প্রতি নিজের নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণা সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মিশিগানের রিপ্রেজেন্টেটিভ টিম ওয়ালবার্গ বলেছেন, ‘গাজার অবস্থা নাগাসাকি ও হিরোশিমার মতো হওয়া উচিত। এটি দ্রুত শেষ করুন।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক বোমা ফেলেছিল। তিনি সেই উদাহরণ টেনে এ কথা বলেন।
টিম ওয়ালবার্গের এহেন বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে প্রগতিশীল রাজনৈতিক মহল। একজন সাবেক খ্রিষ্টান যাজক হয়ে এমন মন্তব্য করতে পারেন কি না, এ নিয়ে অনেকে সন্দেহ পোষণ। তাঁরাও গাজায় গণহত্যা ও তাঁর বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন।
তাঁর এই বক্তব্যর ভিডিও এক্সে (সাবেক টুইটার) ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে একজন কমেন্ট করেছেন, ‘যিশু খ্রিষ্টও এমনটাই করতেন তাই না!’
গাজায় ত্রাণসহায়তা পাঠানোর বিরোধিতা করে ওয়ালবার্গ বলেছেন, ‘গাজায় ত্রাণসহায়তার জন্য আমাদের আর একটি পয়সাও ব্যয় করা উচিত নয়। এই পয়সা উল্টো ইসরায়েলের জন্য ব্যয় করা উচিত। কেননা, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে, যেকোনো ইস্যুতে ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় মিত্র।’
তবে গতকাল রোববার এক বিবৃতিতে ওয়ালবার্গ বলেছেন, মিডিয়া তাঁর মন্তব্যকে ভুলভাবে উপস্থাপন করেছে। ইসরায়েলকে ‘যত দ্রুত সম্ভব’ জয়ী করা উচিত—এই বিশ্বাসে তিনি অনড় বলেও জানান।
ওয়ালবার্গের বক্তব্য ছড়িয়ে পড়লে কাউন্সিল অন আমেরিকান–ইসলামিক রিলেশনস (কাইর) একটি বিবৃতিতে কংগ্রেসম্যানের বক্তব্যকে ‘গণহত্যার স্পষ্ট আহ্বান’ আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে।
কাইরের নির্বাহী পরিচালক দাউদ ওয়ালিদ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘সব আমেরিকানের উচিত ওয়ালবার্গের বক্তব্যর নিন্দা করা, যারা মানুষের জীবন এবং আন্তর্জাতিক আইনকে মূল্য দেয়।’
ওয়ালবার্গ পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের পক্ষে কথা বলা অস্বীকার করে বলেন, ‘যত দ্রুত ইসরায়েল ও ইউক্রেন যথাক্রমে হামাস ও রাশিয়াকে পরাজিত করবে, তত বেশি নিরপরাধ মানুষের প্রাণ বাঁচবে।’
ওয়ালবার্গ আরও বলেন, ‘একটি সংক্ষিপ্ত ভিডিওতে আমি ইসরায়েল এবং ইউক্রেন উভয়েরই যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধে জয়ী হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে একটি রূপক ব্যবহার করেছি। পারমাণবিক বোমা ফেলে বেসামরিক মানুষ হত্যা এড়ানোকে সম্বোধন করিনি। এই রূপকটির প্রসঙ্গ সরিয়ে ফেলে মূল বার্তাকে বিকৃত করেছে। আমি মনেপ্রাণে এই বিশ্বাস করি যে মিত্রদের পাশে আছি।’
এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের মধ্যে চলা এ যুদ্ধে এই অঞ্চলে কমপক্ষে ৩২ হাজার ৭০৫ জন নিহত হয়েছে।
এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৮২ জন নিহত হয়েছেন এবং ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা ইসরায়েলে হামলা চালানোর পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজা উপত্যকায় মোট ৭৫ হাজার ১৯০ জন আহত হয়েছে।