Ajker Patrika
হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নীতি ‘বর্ণবাদী’: অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন

অনলাইন ডেস্ক

ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি নীতি ‘বর্ণবাদী’: অ্যামনেস্টির প্রতিবেদন

ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ড এবং অধিকৃত অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দেশটির সরকারের আইন, নীতি এবং আচরণ ‘বর্ণবাদের’ শামিল বলে মনে করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। 

ফিলিস্তিনিদের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে অ্যামনেস্টির ব্যাপকভিত্তিক একটি প্রতিবেদনে এমন পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে, ইসরায়েলি রাষ্ট্র ‘ইহুদি ইসরায়েলিদের সুবিধার জন্য ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নিপীড়ন এবং আধিপত্যের একটি প্রাতিষ্ঠানিক শাসন’ বজায় রেখেছে। 

এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল বলেছে, প্রতিবেদনে যা কিছু বলা হয়েছে সমস্ত কিছু মিথ্যা এবং প্রতিবেদনটি সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাখ্যান করেছেন তাঁরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, অ্যামনেস্টি ‘মিথ্যা, অসংগতিপূর্ণ এবং ভিত্তিহীন বক্তব্য যা সুপরিচিত ইসরায়েল-বিরোধী বিদ্বেষী সংগঠন থেকে উদ্ভূত’ ধার করেছে। 

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রতিবেদনটি ইহুদি জনগণের জাতিরাষ্ট্র হিসেবে ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বের অধিকারকে অস্বীকার করে। এর উগ্র ভাষা এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের বিকৃতি ইসরায়েলকে দানবরূপে হাজির করার জন্য এবং ইহুদি বিরোধিতায় ইন্ধন দিতেই প্রস্তুত করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক আইনে বর্ণবৈষম্যকে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয়। সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্ণবৈষম্য জাতিগত বিচ্ছিন্নকরণ এবং বৈষম্যের একটি নীতি যা দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘু সরকার ১৯৪৮ থেকে ১৯৯১ সাল পর্যন্ত দেশটির কৃষ্ণাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠদের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করেছিল। 

তিনটি প্রধান আন্তর্জাতিক চুক্তি বর্ণবৈষম্যকে নিষিদ্ধ করে, যার মধ্যে রয়েছে ১৯৭৩ সালের বর্ণবাদ থেকে অনুপ্রাণিত অপরাধ দমন ও শাস্তি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক কনভেনশন। 

কনভেনশনে বর্ণবৈষম্যকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে—একটি জাতিগোষ্ঠীর দ্বারা অন্য কোনো জাতিগোষ্ঠীর ওপর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার উদ্দেশ্যে সংঘটিত অমানবিক কাজ এবং নিয়মতান্ত্রিকভাবে নিপীড়ন। 

ইসরায়েলের ৯৪ লাখ ৫০ হাজার জনসংখ্যার ২০ শতাংশের কিছু বেশি আরব। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ফিলিস্তিনি হিসেবে নিজের পরিচয় দেন। ২৯ লাখ ফিলিস্তিনি পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে বাস করেন, যা ১৯৬৭ সালের মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরায়েল দখল করেছিল। গাজা উপত্যকায় আরও ১৯ লাখ ফিলিস্তিনি বাস করেন, ২০০৫ সালে ইসরায়েল এখান থেকে নিয়ন্ত্রণ প্রত্যাহার করে নেয়। কিন্তু জাতিসংঘ এখনো এটিকে দখলীকৃত বলেই মনে করে। পশ্চিম তীরের বিশাল জনগোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ করে ফাতাহ নেতৃত্বাধীন ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ এবং গাজা নিয়ন্ত্রণ করে হামাস। 

পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে নির্মিত প্রায় ১৪০টি বসতিতে ৬ লাখের বেশি ইহুদি বাস করে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অধিকাংশই আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বসতিগুলোকে অবৈধ বলে মনে করে। যদিও ইসরায়েল এই আপত্তিকে গুরুত্ব দেয় না। 

ধর্ম বা জাতি নির্বিশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে সমস্ত ইসরায়েলি নাগরিকের সমান অধিকার রয়েছে। কিন্তু অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনের উপসংহারে বলা হয়েছে, ইসরায়েল ‘ফিলিস্তিনিদের একটি নিকৃষ্ট অ-ইহুদি জাতিগোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করে এবং সে মতো আচরণ করে’। 

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এই বিচ্ছিন্নকরণ বা আলাদা করে রাখার বিষয়টি আইন, নীতি এবং অনুশীলনের মাধ্যমে একটি নিয়মতান্ত্রিক এবং অত্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। এ সংক্রান্ত আইন ও নীতিগুলো ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের ভূখণ্ডে এবং অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডের মধ্যে ইহুদি ইসরায়েলিদের সমান অধিকার দাবি করা এবং উপভোগ করা থেকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যেই করা হয়েছে। এভাবে ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর নিপীড়ন ও আধিপত্য বিস্তারের উদ্দেশ্যে এসব প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা করে রাখা হয়েছে। এমনকি এটি এমন একটি আইনি শাসনের পরিপূরক হয়েছে যা ইসরায়েলের বাইরে বসবাসকারী ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের অধিকার এবং তাঁদের নিজ ভূমে ফেরা নিয়ন্ত্রণ বা প্রত্যাখ্যান করে। 

১৯৪৮-৪৯ সালে ইসরায়েল সৃষ্টিকে ঘিরে যুদ্ধের ফলে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনির সংখ্যা জাতিসংঘের হিসাবে ৫৩ লাখ। এই নতুন ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনের কয়েক প্রজন্ম। তাঁরা নিজ ভূমে ফেরার অপেক্ষায়। তবে ইসরায়েল বলছে, বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফেরা প্রকল্পে সম্মতি দিলে তাকে জনসংখ্যাগতভাবে ঝুঁকির মুখে ফেলবে এবং ইসরায়েল রাষ্ট্রের অস্তিত্বকেই হুমকির সম্মুখীন করবে। 

অ্যামনেস্টির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার ‘আঞ্চলিক বিভক্তকরণ’, ‘নিপীড়ন ও আধিপত্যবাদী শাসনের একটি মৌলিক উপাদান হিসাবে কাজ করে’। 

এ ছাড়া জাতীয়তা এবং বসবাসের অধিকার ও পারিবারিক জীবনকে অস্বীকার করা, চলাচলের স্বাধীনতার ওপর কঠোর বিধিনিষেধ এবং সম্পদের বরাদ্দ ও বিতরণের বিষয়ে বৈষম্যমূলকভাবে অবরোধ আরোপের বিষয়গুলোও প্রতিবেদনে যুক্ত করেছে অ্যামনেস্টি। 

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অ্যামনেস্টি অমানবিক কাজগুলো নথিভুক্ত করেছে, এর মধ্যে রয়েছে—জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা, প্রশাসনিক আটক ও নির্যাতন, বেআইনি হত্যা এবং গুরুতর জখম করা। মৌলিক স্বাধীনতাকে অস্বীকার করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে স্পষ্ট যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ‘এই ব্যবস্থা বজায় রাখার অভিপ্রায়ে’ এসব করেছে। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের ‘বর্ণবাদ কনভেনশন’ এবং রোম সংবিধির অধীনে ‘বর্ণবাদ থেকে অনুপ্রাণিত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের শামিল’। 

ইসরায়েলের এই আচরণের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ আহ্বান করেছেন অ্যামনেস্টির সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাগনেস ক্যালামার্ড। তিনি বলেছেন, ‘লক্ষ লক্ষ মানুষের প্রাতিষ্ঠানিক এবং দীর্ঘায়িত বর্ণবাদী নিপীড়নের চারপাশে নির্মিত একটি ব্যবস্থার কোনো ন্যায্যতা পাওয়ার সুযোগ নেই।’ 

ক্যালামার্ড আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে অবশ্যই ইসরায়েলি বর্ণবাদী বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে এবং ন্যায়বিচারের পথ অনুসরণ করতে হবে যা লজ্জাজনকভাবে উপেক্ষিত রয়ে গেছে।’ 

এ প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ার লাপিদ বলেছেন, ‘অ্যামনেস্টি সিরিয়াকে “বর্ণবাদী রাষ্ট্র” বলে না—যেটি এমন এক দেশ যার সরকার তার নিজের ৫ লাখ নাগরিককে হত্যা করেছে—ইরান বা আফ্রিকা বা লাতিন আমেরিকার অন্য কোনো দুর্নীতিবাজ ও খুনি সরকারকেও এভাবে বিশেষায়িত করে না অ্যামনেস্টি।’ 

তিনি বলেন, ‘আমি এই কথাটা বলতে চাই না যে, ইসরায়েল যদি ইহুদি রাষ্ট্র না হতো তবে অ্যামনেস্টির কেউ এর বিরুদ্ধে তর্ক করার সাহস করত না। এই সমালোচনার পেছনে অন্য কোনো কারণ আমি দেখছি না।’

গাজা পুনর্গঠনে জরুরি বৈঠকে বসছে আরব দেশগুলো

গাজাবাসীদের মিসরের সিনাইয়ে পাঠানোর প্রস্তাব ইসরায়েলি আইনপ্রণেতার

অন্তর্বর্তী সরকার পরিচালনায় সাংবিধানিক ঘোষণাপত্র তৈরি করছে সিরিয়া

গাজায় রমজান: ধ্বংসস্তূপের মাঝে বিশ্বাসে অবিচল

গাজায় আরও ৫০ দিনের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রের, ইসরায়েলের সায়

তুরস্কে ৪০ বছর লড়াইয়ের পর পিকেকের অস্ত্র সমর্পণের ঘোষণা

সিরিয়ায় রাশিয়ার ঘাঁটি রাখতে যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলের তদবির

ইসরায়েলকে ৩ বিলিয়ন ডলারের বুলডোজার ও গোলাবারুদ দিল যুক্তরাষ্ট্র

গাজা নিয়ে চলচ্চিত্রে হামাস কর্মকর্তার ছেলে, প্রত্যাহার করে দুঃখপ্রকাশ বিবিসির

ইরাকের তেলের জন্য ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পুতিন