অনলাইন ডেস্ক
বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে গাজার যোগাযোগের প্রধান পথ রাফাহ ক্রসিংয়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ইসরায়েল। গত সোমবার রাতভর রাফাহ শহরে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ২০ জনকে হত্যার পর গতকাল মঙ্গলবার সকালে মিসর সীমান্তের এ ক্রসিংটির দখল নেয় ইসরায়েলি বাহিনী (আইডিএফ)।
কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতির আলোচনার মধ্যেই ক্রসিংটি দখলে নিয়ে সেখানে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরায়েল। হামাসের তরফে সোমবার মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে সম্মতি দেওয়ার পরদিন ইসরায়েলের এমন কর্মকাণ্ডে অঞ্চলটিতে নতুন করে আরও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কেননা, এই ক্রসিং দিয়েই খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানিসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাঠানো ত্রাণসহায়তা গাজায় পৌঁছায়।
ক্রসিংটির নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি রাফাহ শহরেও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিয়ে আসছে ইসরায়েল। আইডিএফের হামলা থেকে বাঁচতে গাজার অন্যান্য স্থান থেকে মিসর সীমান্তের এ শহরটিতে আশ্রয় নিয়েছিলেন ১০ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি। ফলে নতুন করে সেখানে বড় আকারের অভিযান চালানো হলে এ মানুষগুলোর শেষ আশ্রয়স্থলটিও আর অবশিষ্ট থাকবে না। নরওয়েজীয় রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব জ্যান এগল্যান্ড বলেন, বাস্তুচ্যুত এ মানুষগুলোর যাওয়ার জন্য নিরাপদ কোনো আশ্রয়স্থল আর অবশিষ্ট নেই। আসন্ন দিনগুলোতে ভয়াবহ বিপর্যয়ের আশঙ্কায় লোকজন নিদারুণ যন্ত্রণাদায়ক এক পরিবেশে দিনাতিপাত করছেন।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের সভাপতি ডেনিস ফ্রান্সিস বলেছেন, রাফায় ইসরায়েলি হামলার অর্থ হলো আরও মানবিক বিপর্যয়। তিনি বলেন, ‘এটি এমন একটি শহর, যেখানে ১০ লক্ষাধিক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন এবং তাঁরা ইতিমধ্যেই সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। কোনোভাবেই সেখানে সামরিক অভিযানের ন্যায্যতা দেওয়ার সুযোগ নেই।’
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনাকে নস্যাৎ করে দিতেই রাফাহ ক্রসিংয়ের দখল নিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এর মধ্য দিয়ে তারা এই অঞ্চলকে একটি বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত করছে।
এদিকে বাস্তুচ্যুত গাজাবাসীদের জন্য একটি মানবিক পরিকল্পনা তৈরির আগে পর্যন্ত ইসরায়েলকে রাফায় সামরিক অভিযান না চালানোর আহ্বান জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ইস্যুতে সোমবার ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এ ফোনালাপে রাফায় অভিযান নিয়ে ওয়াশিংটনের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র জন কার্বি জানান, রাফার বেসামরিক মানুষের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো স্থল অভিযানে সমর্থন নেই যুক্তরাষ্ট্রের।
ইসরায়েলের ভেতরেও গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জোরদার হচ্ছে। হামাসের হাতে আটক ইসরায়েলি জিম্মিদের স্বজনেরা বলছেন, যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে সম্মতি দেওয়ার মাধ্যমে হামাস জিম্মিদের ঘরে ফেরার যে সুযোগ করে দিয়েছিল, সে সুযোগ নস্যাৎ করে দিয়েছে নেতানিয়াহু প্রশাসন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের উচিত জিম্মিদের ফেরাতে এ সুযোগটি গ্রহণ করা।