গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের বিনিময়ে জিম্মিদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীটির এক সূত্র কাতারের সংবাদপত্র আল-আরাবি আল-জাদিদকে জানিয়েছে, প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি-জিম্মি বিনিময় চুক্তির পরবর্তী পর্যায়সমূহ দেরি ছাড়াই এবং শর্তানুসারে বাস্তবায়িত হলে ইসরায়েলের সঙ্গে যেসব বিষয়ে বিরোধ আছে, সেগুলো সাময়িকভাবে স্থগিত রাখতে সম্মত হয়েছে হামাস।
আল-জাদিদের বরাত দিয়ে লেবানিজ সংবাদমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হামাসের সূত্রটি জানিয়েছে, ইসরায়েলের কাছে হামাস সর্বশেষ যে বার্তাটি পাঠিয়েছে তা মিসর, কাতার ও মার্কিন মধ্যস্থতাকারীদের সমর্থন পেয়েছে এবং কায়রো গাজা-মিসর সীমান্তে ফিলাডেলফি করিডর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী প্রত্যাহার যুদ্ধবিরতির পরবর্তী পর্যায়ে সম্পন্ন করার বিষয়ে নমনীয়তা দেখিয়েছে।
এ ছাড়া সূত্রটি জানিয়েছে, আলোচনা শুরু হওয়ার পর থেকে এই সময়ই তারা ‘চুক্তি সম্পন্ন করার সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে’ রয়েছে। হামাস ও মধ্যস্থতাকারীরা ইসরায়েলের কাছ থেকে প্রস্তাবের জবাব আসার প্রত্যাশা করছে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে।
ইসরায়েল জানিয়েছে, তারা এমন কোনো অস্ত্রবিরতিতে রাজি হবে না, যা তাদের পুনরায় আগ্রাসন চালানোর ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করবে। ইসরায়েলি সম্প্রচারমাধ্যম কান গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় জানায়, কাতার ইসরায়েলকে একটি অত্যন্ত ইতিবাচক বার্তা পাঠিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, হামাস আলোচনার অগ্রগতি করতে চায় বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুসারে, বার্তাটি গাজায় জীবিত থাকা ইসরায়েলি বন্দীদের তালিকাকে ঘিরে কেন্দ্রীভূত ছিল। এই যোগাযোগের পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মন্ত্রিসভার নির্বাচিত সদস্য এবং আলোচনাকারী দলের সঙ্গে একটি জরুরি টেলিফোন বৈঠক করেন।
বন্দিবিনিময় আলোচনায় যুক্ত মার্কিন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করা শর্তে কানকে বলেন, ‘আলোচনার মূল বিষয় হলো প্রথম পর্যায় থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ে উন্নীত করা এবং উভয় পর্যায়কে একত্রিত করার প্রয়োজনীয়তা মেনে চুক্তি সম্পন্ন করা।’
এদিকে, ইসরায়েলি অপর একটি সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-১২ একটি সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ইসরায়েলি নিরাপত্তা ও সামরিক প্রতিষ্ঠান বন্দিবিনিময় চুক্তির সম্ভাবনা নিয়ে আশাবাদী। শুক্রবার ইসরায়েলি সংবাদপত্র মারিভ প্রকাশিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮৮ শতাংশ উত্তরদাতা গাজায় আটক বন্দীদের ফিরিয়ে আনার চুক্তিকে সমর্থন করেন। এর মধ্যে ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা পূর্ণাঙ্গ বিনিময় চুক্তির পক্ষে, আর ৩৬ শতাংশ আংশিক চুক্তিকে সমর্থন করছেন।
বর্তমানে যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে, তা দুই ধাপের। প্রথম পর্যায়ে ৪২ দিনের একটি যুদ্ধবিরতি এবং বন্দিবিনিময় চুক্তি অন্তর্ভুক্ত থাকবে। যেখানে ইসরায়েলি নারী, শিশু, বৃদ্ধ এবং নারী সৈনিকদের মুক্তির বিনিময়ে দীর্ঘ ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দীদের একটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
এ ছাড়া, এতে ত্রাণ কার্যক্রমের জন্য মানবিক সাহায্য, যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম প্রবাহ, হাসপাতাল ও কিছু পাবলিক স্থাপনার পুনর্গঠন এবং রাফাহ ক্রসিং পুনরায় খোলার বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে, ক্রসিংয়ের তত্ত্বাবধানের বিষয়টি এখনো অনিষ্পন্ন রয়েছে। প্রথম পর্যায়ে ইসরায়েলি দখলদার বাহিনীকে গাজার পূর্ব সীমান্তে প্রত্যাহারের প্রাথমিক পদক্ষেপও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
দ্বিতীয় পর্যায়ে গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর সম্পূর্ণ প্রত্যাহার, যুদ্ধবিরতির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এবং ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি পুরুষ সৈনিকদের বিনিময় অন্তর্ভুক্ত থাকবে।