সৌদি আরবের শহর মদিনার পূর্বের হাইল অঞ্চলে মরুভূমির ঘুড়ি নিয়ে রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে। বালুতে লুকানো মরুভূমির ঘুড়ির সন্ধান মিলছে। হাইল অঞ্চলে আরব উপদ্বীপের প্রাচীন মরুভূমিতে সভ্যতার নিদর্শনস্বরূপ মরুভূমির ঘুড়ি দেখতে পাওয়া যায়।
মরুভূমির ঘুড়ি বলতে মূলত পাথরের বৃত্ত এবং কাঠামোকে বোঝানো হয়। যা কাইট নামে পরিচিত। প্রধানত পশ্চিম অঞ্চলে এগুলোর সন্ধান পাওয়া গেছে।
আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বহুভুজ, ফানেল এবং ত্রিভুজ আকৃতির কাঠামোগুলো পশ্চিমে হাররাত খায়বার লাভা ক্ষেত্রগুলোর কাছে কেন্দ্রীভূত। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে, খ্রিষ্টপূর্ব চতুর্থ এবং সপ্তম শতাব্দীর এই পাথরগুলো নিওলিথিক যুগের। হাইল অঞ্চলের এই কাঠামোগুলো উত্তর-পশ্চিমে শুয়াইমিস শহরের কাছে কাআ আল-সিবাকে পাওয়া যায়।
কিং সউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ইতিহাসের অধ্যাপক ড. সালমা হাওসাউই আরব নিউজকে বলেন, ‘পুরো সৌদি আরব জুড়ে অসংখ্য পাথরের বৃত্ত, ঘুড়ি এবং কাঠামো ছড়িয়ে রয়েছে। মদিনার উত্তরের অনেক এলাকায় মরুভূমির ঘুড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। খায়বার, ফাদাক, আলউলা এলাকায় মরুভূমির ঘুড়ি দেখা গেছে। বড় বড় এসব মরুভূমির ঘুড়িগুলো বৃত্ত, ত্রিভুজ, ডিম্বাকৃতি, উত্থিত পাথর, পাথরের স্তূপ, বর্গাকার এবং আর্কস আকৃতির হয়ে থাকে।’
ড. সালমা হাওসাউই আরও বলেন, ‘মরুভূমির ঘুড়িগুলো জ্যামিতিক আকৃতির। এর একটি অপরটির সঙ্গে সংযুক্ত বা সংযোগহীন হতে পারে। এগুলো ভবনের অংশ বা পৃথক, বা অসামঞ্জস্যপূর্ণ পাথরের স্তূপ হতে পারে।’
জানা গেছে, রয়্যাল এয়ার ফোর্সের পাইলটরা জর্ডানের পূর্ব মরুভূমির ওপর দিয়ে যাওয়ার পথে প্রথম মরুভূমির ঘুড়ি শনাক্ত করেছিলেন। পাইলটরা নাম রাখেন ‘ঘুড়ি’। কেননা তাদের বাতাস থেকে প্রাপ্ত রূপরেখা শিশুদের খেলনা ঘুড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়।
১৯৭৬ সালের এক প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপে দেখা গেছে, এই মরুভূমির ঘুড়িগুলো ওয়াদি সারহানের উত্তর থেকে হাইল অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলের পরিবেশগত ও বিভিন্ন পার্থক্য থাকায় মরুভূমি ঘুড়ির বিস্তার কাঠামোর বৈচিত্র দেখা যায়।
এক মার্কিন গবেষণায় দেখা গেছে, আওউলা অঞ্চলে যে মরুভূমির ঘুড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে সেটি প্রায় সাত হাজার বছরের পুরোনো। অর্থাৎ গিজার পিরামিড এবং যুক্তরাজ্যের স্টোনহেঞ্জের পাথরের বৃত্তের চেয়েও মরুভূমির এই ঘুড়িগুলো বেশি পুরোনো।
ড. হাওসাউই বলেন, ‘মরুভূমির এই ঘুড়িগুলো আরব উপদ্বীপে বসবাসকারী প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিকাশের পরিধিকে ফুটিয়ে তোলে। এটি প্রমাণ করে সৌদি আরবের এই ভূমিগুলোর ইতিহাসের কতটা পুরোনো।’