গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরের কেন্দ্রস্থলে ট্যাংক পাঠিয়েছে ইসরায়েল। গত রোববার রাতে ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত একটি আশ্রয়শিবিরে বিমান হামলা চালিয়ে অন্তত ৪৫ জনকে হত্যার পর গতকাল মঙ্গলবার শহরটিতে ট্যাংক পাঠায় তেল আবিব। প্রত্যক্ষদর্শীরা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্সকে জানিয়েছেন, রাফাহের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত আল আওদা মসজিদের পাশে ট্যাংকগুলো জড়ো করা হয়েছে। এ ঘটনায় অঞ্চলটিতে ইসরায়েলের বড় ধরনের স্থল হামলার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, সেনারা রাফাহ শহরে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। তবে সেখানে ট্যাংক জড়ো করার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি আইডিএফ। তবে জাতিসংঘের নারী বিষয়ক সংস্থা জানিয়েছে, রাফাহে ‘নিরাপদ এলাকা’ বলে ঘোষিত আশ্রয়শিবিরে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে অন্তত ২১ জন নিহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ১৩ জনই নারী।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অঞ্চলটিতে ৩৬ হাজারের বেশি মানুষকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টায়ই ৪৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে। আহত হয়েছে ১১০ জন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ৩৬ হাজার ৯৬ জনকে হত্যা করেছে দখলদার বাহিনী। একই সময়ে আহত হয়েছে ৮১ হাজার ১৩৬ জন।
আট মাসের কম সময়ে লক্ষাধিক মানুষ হতাহত হওয়ার পর গাজায় নতুন করে কোনো স্থল অভিযান চালানো হলে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কবলে পড়বে অঞ্চলটির বাসিন্দারা। জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ইতিমধ্যেই বহু বেসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। তারপরও উপত্যকাটিতে তাদের যুদ্ধকৌশলে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি।
রোববারের বাস্তুচ্যুত মানুষের আশ্রয়শিবিরে চালানো হামলা থেকেই এটি স্পষ্ট। অন্যদিকে ইসরায়েলের পার্লামেন্টে দেওয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘আমাদের সব লক্ষ্য পূরণের আগে এই যুদ্ধ বন্ধের কোনো ইচ্ছা আমার নেই।’
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় নারী, শিশুসহ বেসামরিক মানুষের ক্রমাগত প্রাণহানির ঘটনায় ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে আলোচনা করেছেন ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত (ইইউ) দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন সোমবার জানিয়েছেন, তিনি ও তাঁর ইইউর সহকর্মীদের এক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, ইসরায়েল আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অমান্য করা অব্যাহত রাখলে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে।
ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি-বিষয়ক কাউন্সিলের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মাইকেল মার্টিন। তিনি জানান, বৈঠকে আন্তর্জাতিক মানবিক আইনবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সমুন্নত রাখার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ইইউ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে স্পষ্ট ঐকমত্য পরিলক্ষিত হয়েছে।