বিদ্রোহীদের তীব্র আক্রমণের মুখে পতন হয় সিরিয়ার দীর্ঘদিনের একনায়কতান্ত্রিক শাসক বাশার আল-আসাদের। তাঁর পতনের পর বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) দেশটির সামরিক বাহিনী পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে সিরিয়ার ডি-ফ্যাক্টো শাসক আহমেদ আল-শারা এইচটিএসের বেশ কয়েকজন শীর্ষ কমান্ডার ও কয়েকজন বিদেশিকে সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়োগ দিয়েছেন।
লেবাননের সম্প্রচারমাধ্যম আল-মায়েদিনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাশার আল-আসাদের সরকারের পতনের কয়েক সপ্তাহ পর এই উদ্যোগের বিষয়টি সামনে এল। এইচটিএসের পক্ষ থেকে পরিচালিত সরকারে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠনের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
গত রোববার আল-শারার নির্দেশে একটি নির্দেশ জারি করা হয়। যেখানে ৪৯ জনের নাম ঘোষণা করা হয়েছে, যাঁরা সামরিক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করবেন। যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে শেয়ার করা এই ঘোষণা গত ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারের পতনের পর প্রথম ধরনের উদ্যোগ। বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এই নিয়োগগুলো সামরিক বাহিনীর উন্নয়ন এবং আধুনিকীকরণের প্রচেষ্টার অংশ এবং নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রচেষ্টার অংশ।
নতুন এই তালিকায় এইচটিএসসহ বেশ কয়েকটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীর বেশ কয়েকজন কমান্ডার অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এ ছাড়া, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে যেসব সামরিক কর্মকর্তা সেনাবাহিনী থেকে বের হয়ে গিয়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন, তাদেরও অনেকেই এই তালিকায় আছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ব্রিটিশ থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের পরামর্শক ফেলো হাইদ হাইদ বলেন, ‘প্রমোশন পাওয়া শীর্ষ সাতজনের সবাই এইচটিএস থেকে এসেছে বলে মনে হচ্ছে।’ তাদের মধ্যে রয়েছেন—এইচটিএসের সামরিক প্রধান মুরহাফ আবু কাসরা, যাকে জেনারেল হিসেবে পদায়িত করা হয়েছে এবং তাঁকে দেশটির অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদের জন্য বিবেচনা করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই আল-শারার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাদের মধ্যে অন্তত ছয়জন বিদেশি রয়েছেন। এই বিদেশিরা আলবেনিয়া, জর্ডান, তুরস্ক, তাজিকিস্তান ও তুর্কিস্তান ইসলামিক পার্টির সঙ্গে যুক্ত উইঘুর যোদ্ধা। হাইদ বলেছেন, ‘এইচটিএস নিজ সদস্যদের এবং তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, ভবিষ্যতের সেনাবাহিনী এবং বর্তমান সেনাবাহিনীর পুনর্গঠনের নেতৃত্বে বসানোর অবস্থানে আনতে সক্ষম হয়েছে।’
আল-শারা স্বাক্ষরিত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, দুজনকে জেনারেল পদে, পাঁচজনকে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে এবং প্রায় ৪০ জনকে কর্নেল পদে উন্নীত করা হয়েছে। জিহাদি গোষ্ঠী বিশেষজ্ঞ আইমেন আল-তামিমি এএফপিকে নিশ্চিত করেছেন যে, তালিকায় বিদেশিরাও রয়েছে। এদের মধ্যে একজন জর্ডানের, একজন উইঘুর এবং একজন তুর্কি রয়েছেন। এই তুর্কি এইচটিএসের অধীনে তুর্কি যোদ্ধাদের একটি গোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং এখন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদে আছেন।
এর আগে, সৌদি আরবের সংবাদমাধ্যম আল-আরাবিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আল-শারা স্বীকার করেন যে, বর্তমানে এইচটিএস সদস্য এবং তাদের সহযোগীরাই সরকারে আধিপত্য বিস্তার করছে। তবে ভবিষ্যতে ‘ব্যাপক অংশগ্রহণ’ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সিরিয়ান অবজারভেটরি নিশ্চিত করেছে যে, নিয়োগপ্রাপ্তদের অধিকাংশই এইচটিএস বা এর সঙ্গে যুক্ত গোষ্ঠীগুলো থেকে এবং অল্পসংখ্যক মিত্র গোষ্ঠী থেকে।