ইয়েমেনে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাবে এবার যুক্তরাষ্ট্রের ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান বিমানবাহী রণতরিতে হামলা চালিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। এক সংবাদ সম্মেলনে সশস্ত্র গোষ্ঠীটির মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারে এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, যুদ্ধজাহাজটিকে লক্ষ্য করে ছোড়া হয় ১৮টি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন। হামলার মুখে জাহাজটি ইয়েমেনের জলসীমা থেকে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।
গত ২৪ ঘণ্টায় দুইবার হুতি বিদ্রোহীদের হামলার শিকার হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধজাহাজটি। তবে রণতরিতে হুতি হামলার বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি যুক্তরাষ্ট্র।
এর আগে গত শনিবার রাতে ইয়েমেনে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যান থেকেই ইয়েমেনের বেশ কয়েকটি শহর লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে নারী ও শিশুসহ অন্তত ৫৩ জন নিহত হয়েছে।
গতকাল রোববার ইউএসএস হ্যারি ট্রুম্যান লক্ষ্য করে পাল্টা হামলা চালানোর দাবি করে হুতিরা। তবে তা অস্বীকার করে মার্কিন সেনাবাহিনী। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, হুতিদের ছোড়া প্রায় ১১টি ড্রোন ভূ-পাতিত করা হয়েছে। যুদ্ধজাহাজটিতে একটি ড্রোনও আঘাত হানতে পারেনি। তবে সোমবারের হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠীটির বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেনাবাহিনী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ হামলার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। যার ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘ইরান সমর্থিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হুতিদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেন্টকম সেনারা।’
বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এক মার্কিন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হুতিদের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান দীর্ঘদিন চলবে। প্রয়োজনে মাসব্যাপী অব্যাহত থাকবে অভিযান।
হুতি বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদমাধ্যম আল মাসাইরাহ জানিয়েছে, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ আল-জওফে সাঁড়াশি অভিযান চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা। মাসাইরাহর তথ্য অনুযায়ী, আল হাজ্ম শহরে সরকারি ভবনে হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আগে, হোদেইদা বন্দরে দুটি হামলার কথা জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যমটি।
ইয়েমেনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সাবা বলছে, হুতিদের কাছে জব্দ থাকা ইসরায়েলি জাহাজ গ্যালাক্সি লিডারের কমান্ড পোস্টকে টার্গেট করেই চালানো হচ্ছে বেশির ভাগ হামলা। সাবার তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত কমান্ড পোস্টটিকে লক্ষ্য করে দুই দফা হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০২৩ সালের নভেম্বরে লোহিতসাগর থেকে ২৫ জন ক্রুসহ জাহাজটি হাইজ্যাক করে হুতি বিদ্রোহীরা। হুতিদের কাছে দীর্ঘ ৪৩০ দিন জিম্মি ছিলেন ওই ২৫ ক্রু। গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর তাঁদের মুক্তি দেয় হুতি বিদ্রোহীরা। কিন্তু জাহাজটি হোদেইদা বন্দরেই রয়ে গেছে।
২০১৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বেশ সরব প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে হুতিরা। ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত পাঁচ মাসে তিন শতাধিক বাণিজ্য জাহাজে হামলা চালিয়েছে হুতি বিদ্রোহীরা। হুতিদের হামলা শুরু হওয়ার আগে লোহিতসাগর দিয়ে বছরে ২৫ হাজারের বেশি জাহাজ যাতায়াত করত। হামলা শুরুর পর এই পথে জাহাজ চলাচল করে মাত্র ১০ হাজার বা তারও কম। যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ৭৫ শতাংশ জাহাজই এখন এই পথ এড়িয়ে চলে। বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাতে জাহাজগুলোকে আফ্রিকা ঘুরে যেতে হয়, যে কারণে আগের তুলনায় ১০ দিন বেশি যাত্রা করতে হয় জাহাজগুলোকে। প্রতি ট্রিপে অতিরিক্ত ১০ লাখ ডলার খরচ বেড়েছে।