ইসরায়েলি আগ্রাসনে গত ৭২ ঘণ্টায় গাজায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৬০০ ফিলিস্তিনি। হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত এই অবরুদ্ধ উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা ৫৯১।
আলজাজিরার তথ্যমতে, গাজার উত্তরাঞ্চলীয় শহর বাইত লাহিয়া ও দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর শাবৌরা এলাকায় স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। নির্বিচারে হত্যা করা হচ্ছে নিরস্ত্র গাজাবাসীকে। বেছে বেছে বেসামরিকদের বাড়ি-ঘর আর শরণার্থীশিবিরের তাঁবু লক্ষ্য করে হামলা চালানো হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, এমন পরিস্থিতিতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হচ্ছে গাজার স্বাস্থ্যকর্মীদের। হাসপাতালগুলোতে হতাহতদের উপচে পড়া ভিড়ে দিশেহারা পরিস্থিতি তাঁদের। চিকিৎসকেরা বলছেন, এত বিপুল পরিমাণ মানুষের স্থানসংকুলান সম্ভব হচ্ছে না। তার ওপর কোনো হাসপাতালই পুরোপুরিভাবে কর্মপরিচালনা করতে পারছে না। নেই প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ। তাঁরা বলছেন, চিকিৎসার একেবারে মৌলিক উপাদানগুলোরও অভাব তৈরি হয়েছে। ব্যথানাশক, চেতনানাশক ও অক্সিজেনের মতো জরুরি জিনিসগুলোও নেই উপত্যকাটির হাসপাতালে।
এ ছাড়া, গত তিন ধরে বিপুল পরিমাণ রক্তেরও প্রয়োজন হচ্ছে। যে পরিমাণ মানুষের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে, ওই পরিমাণ রক্তদাতা নেই উপত্যকায়, হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকেও এরই মধ্যে টান পড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তবে, সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে জ্বালানি না থাকায়। জ্বালানির অভাবে যেকোনো সময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যেতে পারে হাসপাতালগুলো।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে জানা যায়, গত ১৮ দিন ধরে উপত্যকায় ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না নেতানিয়াহুর সেনারা।
গাজায় মানবিক বিপর্যয়ের চিত্র যখন এমন, তখন ইসরায়েলকে গাজা ইস্যুতে নিজেদের পরিকল্পনা পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। বিশেষ করে হামাসের হাতে জিম্মিদের ভবিষ্যৎ কী হবে, তা ভেবে গাজায় নৃশংসতা থামানোর কথা বলছে সংস্থাটি। তবে, নেতানিয়াহু প্রশাসন সাফ জানিয়ে দিয়েছে, গাজা উপত্যকায় তাঁদের সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকবে।
এদিকে, গাজায় আইডিএফের অভিযানের প্রতি আবারও পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্প প্রশাসনের জাতীয় নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক পোস্টে লিখেছেন, ‘হামাসের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আত্মরক্ষার সম্পূর্ণ অধিকার আছে ইসরায়েলের। হামাস যদি সব জিম্মিদের মুক্তি দিত তাহলে যুদ্ধবিরতি বাড়ানো হতো। কিন্তু তারা যুদ্ধ বেছে নিয়েছে।’