হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

যুদ্ধবিরতির মুহূর্তে গাজায় হতভাগ্য একটি পরিবারের গল্প

স্বামী ও দুই সন্তানকে হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হানান। ছবি: আল-জাজিরা

সকাল সাড়ে ৮টা থেকেই যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার কথা ছিল। গাজার আল-কিদরা পরিবারের কাছে এটি ছিল একটি দারুণ সুখবর। কারণ টানা ১৫ মাস ধরে ইসরায়েলি হামলা সহ্য করে টিকে ছিল পরিবারটি। এই সময়ের মধ্যে অবশ্য তারা একাধিক বার বাস্তুচ্যুত হয়েছে।

মঙ্গলবার এক প্রতিবেদনে আল-জাজিরা জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৪৬ হাজার ৯০০ মানুষের মধ্যে আল-কিদরা পরিবারের অনেক স্বজনও ছিলেন। তবে এই পরিবারটি বেঁচে ছিল। যুদ্ধবিরতির খবর শুনে তারা বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য উদ্‌গ্রীব হয়ে উঠেছিল।

পরিবারের প্রধান আহমেদ আল-কিদরা তাই তাঁর সাত সন্তানকে একটি গাধার গাড়িতে তুলে খান ইউনিসের পূর্ব দিকে রওনা হন। তাঁর মনে হয়েছিল, ভ্রমণ এখন নিরাপদ। বোমাবর্ষণ থেমে গেছে।

কিন্তু পরিবারটি জানত না—ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কিছুটা বিলম্বিত হয়েছে। তারা জানত না, এই অতিরিক্ত কয়েক ঘণ্টায়ও বোমা ফেলার প্রস্তুতি নিয়ে গাজার আকাশে ইসরায়েলি বিমান উড়ছে।

আহমেদের স্ত্রী হানান এক আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য তিনি তাঁদের জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন। ভেবেছিলেন, পরে পরিবারের সঙ্গে তিনি যোগ দেবেন। এই সময়ই একটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনতে পান তিনি।

হানান বলেন, ‘বিস্ফোরণটি আমার হৃদয়ে আঘাত হেনেছিল।’ তাঁর মন বলছিল, এই বিস্ফোরণে হয়তো তাঁর সন্তানদের ভাগ্যে খারাপ কিছু ঘটে গেছে। বিস্ফোরণের পর তাই তিনি চিৎকার করে ওঠেন, ‘আমার সন্তান, আমার সন্তান!’

হানানের আশঙ্কাই ঠিক হলো। সেই গাধার গাড়িতে ইসরায়েলি মিসাইল আঘাত হানলে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান হানানের বড় ছেলে ১৬ বছরের আদলি এবং পরিবারের সবচেয়ে ছোট ও আদরের সদস্য ৬ বছর বয়সী স্যামা।

হানানের ১২ বছর বয়সী কন্যা ইয়াসমিন বেঁচে যায় সৌভাগ্যবশত। সে জানায়, চার চাকার একটি গাড়ি ছিল তাদের সামনে। জায়গাটিতে তখন অনেকেই যুদ্ধবিরতির খবরটি উদ্‌যাপন করছিল। সম্ভবত এই কারণেই মিসাইলটি আঘাত হানে।

ইয়াসমিন বলে, ‘আমি স্যামা আর আদলিকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখলাম। আর আমার বাবা রক্তাক্ত অবস্থায় অজ্ঞান হয়ে গাড়িতে পড়ে ছিল।’

গাড়িটিতে ইয়াসমিনের ছোট বোন ৮ বছরের আসিলও ছিল। আসিলকে টেনে বের করে ইয়াসমিন। কিন্তু এর পরপরই দ্বিতীয় আরেকটি মিসাইল সেখানে আঘাত হানে।

এই হামলায় সৌভাগ্যবশত বেঁচে যায় হানানের ১১ বছর বয়সী ছেলে মোহাম্মদও। তবে হানানের স্বামী আহমেদকে অনেক চেষ্টা করেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে মারা যান তিনি।

খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে আহত আরেক মেয়ে ইমানের বিছানার পাশে বসে হতভম্ব হানান প্রশ্ন করেন—‘যুদ্ধবিরতি তবে কোথায় ছিল?’

জানা গেছে, যুদ্ধবিরতি উদ্‌যাপনের উত্তেজনায় আল-কিদরা পরিবারটি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর একটি ঘোষণা মিস করেছিল। পরিবারটি জানত না, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে আরও তিন ঘণ্টা দেরি হবে এবং এর মধ্যেই তাদের পরিবারের তিন সদস্য নিহত হবে। গাজার শেষ কয়েক ঘণ্টায় নিহত ১৯ জন ফিলিস্তিনির মধ্যে এই তিনজনও ছিল।

হানান কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাঁকে এখন তাঁর স্বামী এবং দুই সন্তানের অনুপস্থিতিতে বেঁচে থাকতে হবে। নিহত কন্যা স্যামার প্রসঙ্গে হানান বলেন, ‘সে আমার সবচেয়ে ছোট এবং সবচেয়ে আদুরে ছিল। যখনই আমি আরেকটি সন্তানের কথা বলতাম, সে রেগে যেত।’

হানানের কথায় আদলি ছিলেন তাঁর পরিবারের ‘ভরসার খুঁটি’। হানান বলেন, ‘আমার সন্তানেরাই ছিল আমার পৃথিবী।’

শেষ মুহূর্তে নিজের দুই সন্তান আর স্বামীকে হারিয়ে হানানের মনে হচ্ছে, বিগত ১৫ মাস ধরে তাঁদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম এক নিমেষেই বৃথা হয়ে গেছে।

যুদ্ধের মধ্যেই গাজায় দুবার সন্তান প্রসবের ভয়াবহ স্মৃতি হাদিলের

আসাদের খালি হয়ে যাওয়া কুখ্যাত কারাগারগুলো ভরে উঠছে আবার

কুকুর লেলিয়ে পুরুষ ফিলিস্তিনিকে ধর্ষণ—বিবিসির প্রতিবেদনে ইসরায়েলি কারাগারে নির্যাতনের চিত্র

ফিলিস্তিনিদের প্রলোভনে ফেলে গাজা খালি করার মিশনে ইসরায়েলঘনিষ্ঠ ভুয়া সংস্থা

গাজায় নতুন শাসনকাঠানো কার্যকর শিগগির: মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ধ্বংসস্তূপের মধ্যেই গাজার ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে পাঠদান শুরু

ইসরায়েলি সেটেলারদের আগ্রাসন ঠেকাতে ফিলিস্তিনি গ্রামে মানবঢাল একদল স্বেচ্ছাসেবক

সিরিয়ায় একযোগে ৭০ স্থানে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান হামলা

সমুদ্র উপকূলে পাওয়া গ্যাস বিক্রি করে গাজা পুনর্গঠনের পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্র–আরব আমিরাত ও ইসরায়েলের

আরব বসন্তে ক্ষমতাচ্যুত একনায়কেরা এখন কোথায় কেমন আছেন