অনলাইন ডেস্ক
দীর্ঘ ১৫ মাসের যুদ্ধ শেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে নির্ধারিত শর্ত অনুসারে, ৯০ ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে ইসরায়েল। বিনিময়ে ৩ ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে হামাস। মুক্তি পাওয়া তিন ইসরায়েলি হলেন—রমি গোনেন (২৪), এমিলি দামারি (২৮) ও দোরোন স্টেইব্রেখার (৩১)।
এই তিনজনকে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালানোর সময় ধরে নিয়ে আসে। রমি গোনেন উত্তর ইসরায়েলের কফার ভেরাদিম থেকে দক্ষিণের নেগেভ মরুভূমিতে অনুষ্ঠিত নোভা সংগীত উৎসবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন।
উৎসব চলাকালে হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত পার হয়ে হামলা চালান। হামলার সময় সাইরেন বেজে উঠলে রোমি তাঁর পরিবারকে ফোন করেন। তাঁর মা মেইরাভ শেষ ফোন কলে গুলির শব্দ আর আরবিতে চিৎকার শুনতে পান। পালিয়ে যাওয়ার সময় রমিকে হামাসের যোদ্ধারা আটক করে।
ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করা ইসরায়েলি সংস্থা হোস্টেজেস অ্যান্ড মিসিং ফ্যামিলিস ফোরামের মতে, রমি নাচতে ভালোবাসতেন। তিনি ১২ বছর ধরে নাচের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। তিনি পেশায় নৃত্য নির্দেশক। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর শেয়ার করা এক ভিডিওতে দেখা যায়, রমির বাবা তাঁর মেয়ের মুক্তির ভিডিও দেখে আনন্দে লাফিয়ে ওঠেন এবং আবেগে ভেঙে পড়েন।
দোরোন স্টেইব্রেখার ৩১ বছর বয়সী পশুচিকিৎসা সহকারী। ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় গাজার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের কাছে কিব্বুতজ কাফার আজা এলাকায় তাঁর অ্যাপার্টমেন্ট থেকে তাঁকে ধরে আনে হামাস। সীমান্ত বরাবর ইসরায়েলের অন্য গ্রামগুলোর মতোই এই এলাকাটিও ৭ অক্টোবর হামাসের সশস্ত্র যোদ্ধাদের দ্বারা আক্রান্ত হয়।
হামলার সময় দোরোন তাঁর পরিবার ও বন্ধুদের কাছে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে বার্তা পাঠিয়ে জানান, তিনি খাটের নিচে লুকিয়ে আছেন। তাঁর শেষ ভয়েস মেসেজে শোনা যায়, তিনি চিৎকার করে বলছেন, ‘ওরা আমাকে ধরে ফেলেছে।’ এ সময় গোলাগুলির শব্দ ও আরবিতে চিৎকার শোনা যায়।
হামাসের হাতে জিম্মি হওয়ার প্রায় চার মাস পর পর্যন্ত দোরোনের অবস্থান সম্পর্কে তাঁর পরিবার কিছুই জানতে পারেনি। মুক্তি পাওয়ার পর গতকাল দোরোনের পরিবার বলেছে, ‘অসহনীয় ৪৭১ দিন পর, আমাদের প্রিয় দোদো আবার আমাদের কাছে ফিরে এসেছে।’
২৮ বছর বয়সী এমিলি দামারি ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি নাগরিক। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর কিব্বুতজ কাফার আজা থেকে তাঁকে ধরে আনে হামাস। হামলার সময় তাঁর হাতে গুলি লাগে। মুক্তি পাওয়ার পরের ছবিতে দেখা যায়, এমিলির হাতে ব্যান্ডেজ এবং গুলির কারণে তাঁর দুই আঙুল নেই।
হামাসের হামলার সময় এমিলির মা ম্যান্ডি দামারি একই এলাকার আরেকটি বাড়িতে ছিলেন। তিনি সে সময় একটি নিরাপদ কামরায় লুকিয়ে ছিলেন। তিনি যে ঘরে লুকিয়ে ছিলেন, সেটির দরজার হাতলে গুলি লেগে সেটি আটকে যাওয়ার কারণে হামলাকারীরা ঢুকতে পারেনি।
হামলার সময় এমিলি তাঁর মাকে একটি হৃদয়ের ইমোজি পাঠান এবং সেটিই ছিল তাঁদের শেষ যোগাযোগ। মুক্তির পর এমিলির সঙ্গে তাঁর মায়ের পুনর্মিলনের আবেগঘন দৃশ্য দেখা যায়। এমিলির মা বলেন, ‘এই ভয়ংকর সময়ে যারা এমিলির নাম বলেই গেছেন এবং তাঁর মুক্তির জন্য লড়াই চালিয়ে গেছেন, তাঁদের সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’