গাজা থেকে আটক ফিলিস্তিনিদের ইসরায়েলের সামরিক হাসপাতালে ‘অমানবিক’ অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। মঙ্গলবার প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আটক ফিলিস্তিনিদের হাসপাতালের বিছানায় বেঁধে রাখা ছাড়াও তাঁদের চোখ বেঁধে রাখা এবং নেংটি পরতে বাধ্য করা হচ্ছে।
ইসরায়েলেরই একটি গোপন সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কীভাবে একটি সামরিক হাসপাতালে ব্যথানাশক ছাড়াই ফিলিস্তিনি বন্দীদের ওপর চিকিৎসা কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর ফলে বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বন্দীরা অবর্ণনীয় ব্যথা সহ্য করছেন বলেও দাবি করা হয়েছে।
দ্বিতীয় আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, গুরুতরভাবে অসুস্থ ফিলিস্তিনি রোগীদের প্রায় সময়ই চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করে সরকারি হাসপাতালগুলো। পরে তাঁদের ঠাঁই হয় অস্থায়ী সামরিক হাসপাতালে। সেখানে এক অবর্ণনীয় অমানবিক পরিস্থিতির ভেতর দিয়ে যেতে হয় তাঁদের।
গাজা থেকে বন্দী হওয়া একজন বর্ণনা করেছেন, ইসরায়েলি সেনারা তাঁকে আটকের সময় সংক্রমিত ক্ষতের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করলে তাঁর পা কেটে ফেলতে হয়েছিল। তবে অভিযুক্ত ওই সামরিক হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক বিনা কারণে অঙ্গচ্ছেদের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন—পায়ের পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, এটিকে কেটে ফেলা ছাড়া আর কোনো গতি ছিল না। তবে হাসপাতালের ভেতরে শিকলে বেঁধে রাখাসহ অন্যান্য অভিযোগগুলোকে ‘অমানবিক’ হিসেবে স্বীকার করেছেন ওই চিকিৎসক।
এদিকে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জোর দিয়ে বলে আসছে যে, বন্দীদের সঙ্গে ‘যথাযথ এবং যত্নসহকারে’ আচরণ করা হচ্ছে। যদিও অতীতে আরও বেশ কয়েকবার ইসরায়েলের হাসপাতালে গাজাবাসীদের সঙ্গে অমানবিক আচরণের খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ইতিপূর্বে ফিলিস্তিনের উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্ম সংস্থা ইসরায়েল থেকে মুক্তি পাওয়া প্রায় ১০০ জন বন্দীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিল। সংস্থাটির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়—মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীরা দাবি করেছিলেন, ইসরায়েলে তাঁরা চোখ বেঁধে রাখা, মারধর ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে কুকুর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছিলেন তাঁরা। সুচিকিৎসা না দিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে আইনি সুবিধা থেকেও।
যে হাসপাতালটির ওপর এ ধরনের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি, সেটির অবস্থান ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত এসডিই তাইমান ডিটেনশন ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পে গাজা থেকে আটক হওয়া বন্দীদের চিকিৎসার জন্য একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপন করা হয়েছিল। সাম্প্রতিক সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এই হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করে। কারণ সরকারি কিছু হাসপাতাল আহত ফিলিস্তিনিদের চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেছিল।
গাজা থেকে আটক হওয়া ফিলিস্তিনিদের তাইম্যান ডিটেনশন ক্যাম্পে নেওয়া হয় মূলত জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য। কোনো অভিযোগ না থাকায় সেখান থেকে কিছু ফিলিস্তিনিকে গাজায় ফেরতও পাঠানো হয়েছে। তাঁদের মধ্যেই একজন ছিলেন আবু সুফিয়ান সালাহ, যাঁর পা কেটে ফেলা হয়েছিল।