হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

গাজায় চলছে ইসরায়েলি হামলা, যুদ্ধবিরতির খবর নেই

অনলাইন ডেস্ক

ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি একটি এলাকা। ছবি: এএফপি

গাজায় স্থানীয় সময় আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) মুখপাত্র দানিয়েল হ্যাগারি জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি শুরু হয়নি এবং গাজায় এখনো ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী ‘অভিযান’ চালিয়ে যাচ্ছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীর মুখপাত্র দানিয়েল হ্যাগারি আজ রোববার গাজার যুদ্ধবিরতি নিয়ে একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আজ (রোববার) সকাল থেকে হামাস তার দায়িত্ব পালন করছে না এবং চুক্তি অনুযায়ী আজ যাদের মুক্তি দেওয়ার কথা ছিল তাদের নাম ইসরায়েলকে দেয়নি।’

হ্যাগারি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু) নির্দেশ অনুসারে, যতক্ষণ হামাস তার দায়িত্ব পালন না করবে, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এখনো গাজায় হামলা চালাচ্ছে, কারণ হামাস এখনো চুক্তির প্রতি তার দায়বদ্ধতা পূর্ণ করছে না।’

ইসরায়েলি এই সমর নেতা বলেন, ‘যেমনটা আমরা আগেই জানিয়েছিলাম, হামাস এখনো মুক্তি দেওয়ার জন্য যাদের নামের তালিকা পাঠানোর কথা ছিল, তা পাঠায়নি। ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি দেরির জন্য প্রযুক্তিগত এবং মাঠ পর্যায়ের ত্রুটি ও সমস্যাকে দায়ী করেছে।’

এর আগে, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাস যতক্ষণ প্রথম ধাপে যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে তাদের তালিকা না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে না। এই অবস্থায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

নেতানিয়াহুর এমন এক সময়ে যুদ্ধবিরতি বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন যখন যুদ্ধবিরতি শুরুর মাত্র এক ঘণ্টা বাকি ছিল। আজ রোববার সকালে নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) নির্দেশ দিয়েছেন, যে যুদ্ধবিরতি সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, তা তখনই শুরু হবে যখন ইসরায়েল হামাসের কাছ থেকে যেসব জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে তার তালিকা পাবে। হামাস এটি সরবরাহ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

এর আগে, কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে শেয়ার এক পোস্টে বলেন, ‘চুক্তির পক্ষগুলো এবং মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে সমন্বয়ের পর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে।’ গাজাবাসীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সতর্ক থাকুন, সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং কেবল সরকারি সূত্র থেকে পাওয়া নির্দেশনার অপেক্ষা করুন।’

এদিকে, যুদ্ধবিরতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বন্দী বিনিময় চুক্তি নিয়ে আল-মায়াদিনকে এক বিশেষ সূত্র গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানিয়েছে। গত শুক্রবার সূত্রটি জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস যেকোনো নারী বা শিশু বন্দীকে মুক্তি দিলে, প্রতি বন্দীর বিপরীতে ইসরায়েলি কারাগার থেকে ৩০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। এর মধ্যে নারী ও শিশুরাও থাকবে। একইভাবে, ৫০ বছর বা তার বেশি বয়সী কিংবা অসুস্থ বন্দীদের ক্ষেত্রে প্রতি বন্দীর বদলে ৩০ জন বয়স্ক বা অসুস্থ ফিলিস্তিনি বন্দী মুক্তি পাবে।

এ ছাড়া, একজন নারী ইসরায়েলি সেনাকে মুক্তি দেওয়ার বিনিময়ে ৩০ জন ফিলিস্তিনি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বন্দী এবং ১৫ বছরের কম সাজা বাকি থাকা আরও ২০ জন বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে। চুক্তির প্রথম ধাপে ২০১১ সালের বিনিময় চুক্তিতে মুক্তি পাওয়া কিন্তু পরবর্তীতে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পুনরায় গ্রেপ্তার হওয়া ৪৭ জন ফিলিস্তিনি বন্দীকে মুক্তি দেওয়া হবে।

তা ছাড়া, এই চুক্তির আওতায় মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনি বন্দীদের আগের অভিযোগে পুনরায় গ্রেপ্তার করা যাবে না। তাদের বাকি সাজা ভোগ করতে হবে না এবং মুক্তির শর্ত হিসেবে কোনো নথিতে স্বাক্ষর করতে হবে না।

এদিকে, যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকরের কয়েক ঘণ্টা আগে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, মুক্তি পেতে যাওয়া জিম্মিদের তালিকা এখনো প্রকাশ করেনি হামাস। এই কারণে চুক্তি কার্যকরে বিলম্ব হতে পারে।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েলের প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিবৃতির বরাতে বলা হয়েছে, নেতানিয়াহু বলেছেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত জিম্মিদের তালিকা হাতে না আসছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা এই চুক্তির ব্যাপারে অগ্রসর হব না। ইসরায়েল কোনোভাবেই চুক্তি লঙ্ঘন সহ্য করবে না। আর এমন কিছু হলে তার সম্পূর্ণ দায় হামাসের।’

যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুযায়ী, মুক্তির অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে হামাসকে জিম্মিদের নামের তালিকা সরবরাহ করতে হবে। তবে এখনো হামাস এই তালিকা প্রকাশ করেনি। রোববার (১৯ জানুয়ারি) স্থানীয় সময় বিকেল ৪টা পর্যন্ত জিম্মিদের মুক্তির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।

যুদ্ধবিরতির প্রতিবাদে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রীর পদত্যাগ

গাজায় ৪৭ হাজার ফিলিস্তিনি হত্যার পর যুদ্ধবিরতি টানল ইসরায়েল

মুক্তি পেতে যাওয়া ৩ জিম্মির নাম প্রকাশ হামাসের, গাজায় ১০ জনকে হত্যা করল ইসরায়েল

জিম্মি তালিকা নিয়ে ইসরায়েল-হামাস দ্বন্দ্ব, গাজায় যুদ্ধবিরতি অনিশ্চয়তায়

গাজার রাফাহ থেকে ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার শুরু

যুদ্ধবিরতি চুক্তির পরও গাজায় ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত, নিহত বেড়ে ৪৭ হাজার

গাজা যুদ্ধবিরতি শুরু কয়েক ঘণ্টা পর, যা ঘটবে প্রথম ধাপে

গাজায় যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন নিয়ে জটিলতা

ইরানে সুপ্রিম কোর্টের ভেতরে দুই বিচারপতিকে গুলি করে হত্যা

গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ইসরায়েলের ব্যর্থতা মনে করেন হিজবুল্লাহ প্রধান

সেকশন