হোম > বিশ্ব > মধ্যপ্রাচ্য

আসাদ-পরবর্তী সিরিয়া

সিরিয়াকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা ইসরায়েলের

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­

আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫, ০১: ১৯
সিরিয়ার লাতাকিয়া বন্দরে ইসরায়েলি হামলায় বিধ্বস্ত যুদ্ধজাহাজের ছবি। ছবি: সংগৃহীত

সিরিয়ার নতুন রাজনৈতিক বাস্তবতায় দেশটিতে নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক করেছেন ইসরায়েলি মন্ত্রিসভার সদস্যরা। মূলত সিরিয়ায় নিজেদের প্রত্যাশিত বিভাজন নিয়ে আলোচনার জন্য এর আয়োজন করা হয়।

মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই জানিয়েছে, সিরিয়াকে বিভক্ত করার পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রিসভার ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। গত মঙ্গলবারের ওই আলোচনায় বিশেষ করে দামেস্কের বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বিষয়ে নানা পর্যালোচনা উঠে আসে। তবে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল দামেস্কে ক্ষমতার পালাবদলের পর সেখানে তুরস্কের ভূমিকা এবং সিরিয়ার ডি ফ্যাক্টো শাসক ও এইচটিএসপ্রধান আহমেদ আল-শারাকে নিয়ে তেল আবিবের উদ্বেগের বিষয়টি। বিশেষ করে এইচটিএসপ্রধানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পরিষ্কার হতে চান ইসরায়েলি কর্মকর্তারা।

গত মাসেই নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজেদের পছন্দে ভবিষ্যৎ সিরিয়াকে সাজাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র, তুরস্ক ও ইসরায়েল। আসাদের পতনের পর নতুন সরকার যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে মনোনিবেশ করছে, ঠিক এ সময়ে দেশটির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মোড়লেরা। নতুন সরকারের মাধ্যমে ভবিষ্যৎ সিরিয়ায় নিজেদের অ্যাজেন্ডা বা স্বার্থ সুরক্ষিত করতে চাইছে তারা।

আসাদবিরোধী লড়াইয়ে প্রকাশ্যে সিরিয়ার বর্তমান ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছে প্রতিবেশী তুরস্ক। ফলে দামেস্কের নতুন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের বিষয়টি অনেকটাই স্পষ্ট। অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যে আঙ্কারার ভূমিকা নিয়ে অস্বস্তি রয়েছে ইসরায়েলের। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ইস্যুতে তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সরব ভূমিকায় ক্ষুব্ধ তেল আবিব। গাজায় ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে তেল আবিবের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থগিতেরও ঘোষণা দেয় আঙ্কারা। গত নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রেসিডেন্টকে নিজেদের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দেয়নি তুর্কি কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বভাবতই নতুন সিরিয়ায় তুরস্কের কর্তৃত্ব দেখতে চায় না তেল আবিব।

গত ডিসেম্বরে মিডল ইস্ট আইয়ের এক প্রতিবেদনে সিরিয়ার বিভাজনের ইসরায়েলি পরিকল্পনার বিষয়টি সামনে আসে। মঙ্গলবারের বৈঠক ছিল মূলত এরই ধারাবাহিকতা। এদিন মন্ত্রিসভার সদস্যদের বৈঠকে যেসব পর্যালোচনা উঠে এসেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে আসন্ন আলোচনায় সে বিষয়গুলো তুলে ধরবেন মন্ত্রীরা।

তেল আবিবের পরিকল্পনা অনুযায়ী, সিরিয়াকে কয়েকটি প্রাদেশিক অঞ্চল বা ক্যানটনে বিভক্ত করা হবে, যাকে ‘পুরো সিরিয়ার সব জাতিগত গোষ্ঠীর নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষার’ একটি উপায় হিসেবে বর্ণনা করছেন ইসরায়েলি কর্মকর্তারা। এর মধ্যে দ্রুজ সম্প্রদায় ও কুর্দি জনগোষ্ঠীও রয়েছে।

ইসরায়েলের জ্বালানি ও অবকাঠামোবিষয়ক মন্ত্রী এলি কোহেন সম্প্রতি ইসরায়েল কর্তৃক আয়োজিত এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনেও তেল আবিবের পরিকল্পনার বিষয়টি তুলে ধরেন বলে জানা গেছে। মিত্রদের তিনি প্রস্তাবটি পর্যালোচনার আহ্বান জানান। যদিও ইসরায়েলি রাজনীতিকেরা জানেন, তেল আবিবের দিক থেকে আসা যেকোনো উদ্যোগ সিরিয়ার ভেতরে ব্যাপক প্রতিরোধের মুখে পড়বে।

এ পরিকল্পনার বিষয়ে অবগত আঞ্চলিক নিরাপত্তা সূত্রগুলো গত ডিসেম্বরে মিডল ইস্ট আইকে জানিয়েছে, আসাদকে রেখেই সিরিয়াকে তিনটি ব্লকে বিভক্ত করার ইসরায়েলি পরিকল্পনা এরই মধ্যে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। তারা মূলত সিরিয়ার উত্তর-পূর্বে কুর্দি এবং দক্ষিণে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সামরিক ও কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে এই অঞ্চলে নিজের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল। ওই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর মধ্যকার সংযোগবিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাতের অর্থায়নে অপেক্ষাকৃত দুর্বল আসাদকেও খণ্ডিত সিরিয়ার একাংশের ক্ষমতায় আসীন রাখার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সেটি ভেস্তে যাওয়ায় এখন মধ্যপ্রাচ্যের নয়া বন্দোবস্ত নিয়ে ভাবতে হচ্ছে ইসরায়েলি কর্মকর্তাদের। কর্মকর্তাদের তৎপরতায় অবশ্য এটি পরিষ্কার, তেল আবিব এখনই এ বিষয়ে হাল ছাড়তে রাজি নয়। তারা এখন নতুন শাসকদের কার্যক্রম এবং তাদের ওপর তুরস্কের প্রভাবের বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। এর ভিত্তিতেই নতুন কৌশল নির্ধারণ করতে চায় তেল আবিব। মঙ্গলবার ইসরায়েলি মন্ত্রীদের বৈঠক মূলত তারই ইঙ্গিত।

খণ্ডিত সিরিয়ার একটি ছোট অংশে আমিরাতি অর্থায়নে আসাদকে টিকিয়ে রাখা গেলে দেশটিতে তুরস্কের বাড়বাড়ন্তও অনেকাংশেই নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত বলে মনে করছে তেল আবিব। ইসরায়েলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডিয়ন সারের মতে, সিরিয়া ও লেবাননে কুর্দি এবং দ্রুজদের সঙ্গে ইসরায়েলের যোগাযোগ অব্যাহত রাখা উচিত। তাদের রাজনৈতিক সক্ষমতা ও নিরাপত্তার মতো বিষয়গুলো বিবেচনায় নিতে হবে। তিনি বলেন, বিদ্যমান বাস্তবতায় তেল আবিবকে এটি অনুধাবন করতে হবে, এটি এমন একটি অঞ্চল, যেখানে ইসরায়েলিরা সব সময়ই সংখ্যালঘু থাকবে। ফলে এই অঞ্চলের অন্য সংখ্যালঘুদের সঙ্গে তেল আবিবের জোটবদ্ধ হওয়াটাই স্বাভাবিক।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, সংবাদমাধ্যম বা যেকোনো মাধ্যমে প্রচারিত কোনো ছবি, ভিডিও বা তথ্য বিভ্রান্তিকর মনে হলে তার স্ক্রিনশট বা লিংক কিংবা সে সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য আমাদের ই-মেইল করুন। আমাদের ই-মেইল ঠিকানা factcheck@ajkerpatrika.com

সেনাপ্রধানকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করল লেবানন

তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক ঝালাই করছে ভারত

নেতানিয়াহুকে ‘কুচকুচে কালো কুকুরছানা’ বলে গালি দেওয়ার ভিডিও শেয়ার ট্রাম্পের