অনলাইন ডেস্ক
পাকিস্তানের কোয়েটা শহরে নিজের কিশোরী কন্যাকে গুলি করে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন এক বাবা। আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি জানিয়েছে, গত মঙ্গলবার হিরা নামের ১৩-১৪ বছর বয়সী সেই কিশোরীকে হত্যার বিষয়টি পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন তাঁর বাবা আনোয়ার উল-হক। তিনি দাবি করেছেন, টিকটকে ভিডিও পোস্ট করাকে তিনি ‘আপত্তিকর’ মনে করেন। তাই এই নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন।
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার শুরুর দিকে নিজের মেয়েকে হত্যার কথা অস্বীকার করেছিলেন আনোয়ার। তিনি জানিয়েছিলেন, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাঁর মেয়েকে গুলি করেছে। কিন্তু তদন্তের পর তিনি নিজেই হত্যার দায় স্বীকার করেন।
আনোয়ার উল-হক মার্কিন নাগরিক এবং তিনি সম্প্রতি পরিবার নিয়ে ২৫ বছর পর পাকিস্তানে ফিরেছিলেন। পুলিশ জানায়, হিরার পোশাক, জীবনধারা ও সামাজিক মেলামেশা নিয়ে তাঁর পরিবারের আপত্তি ছিল।
পাকিস্তানে ‘অনার কিলিং’ বা ‘সম্মান রক্ষার নামে হত্যা’ খুবই সাধারণ ঘটনা। সেখানে প্রায় সময়ই নারীরা পরিবারের সদস্যদের দ্বারাই হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, পাকিস্তানে প্রতি বছর শত শত নারী এই সহিংসতার শিকার হন।
তদন্তকারীরা বলছেন, এটি একটি ‘অনার কিলিং’ হতে পারে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। হিরার মোবাইল ফোন পুলিশের হাতে এসেছে, তবে সেটি লক করা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় হিরার মামাকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অনার কিলিং-এর বিষয়টি প্রমাণিত হলে অভিযুক্তদের আজীবন কারাদণ্ডের সাজা হতে পারে।
২০১৬ সালে পাকিস্তানের সরকার আইন পরিবর্তন করে ‘অনার কিলিংয়ে’ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের পারিবারিক ক্ষমার সুযোগ বন্ধ করে দেয়। এর আগে, এই ধরনের হত্যাকাণ্ডে পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকা অপরাধীরা সাজা এড়াতে পারতেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে ইতালির একটি আদালত এক পাকিস্তানি দম্পতিকে তাদের ১৮ বছর বয়সী মেয়েকে হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। মেয়েটি পিতামাতার পছন্দ করা বিয়েতে রাজি ছিলেন না। ২০১৬ সালে পাকিস্তানের জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া তারকা কান্দিল বালুচকে তাঁর ভাই হত্যা করেন। পরে আদালতে তিনি দোষ স্বীকার করেন এবং বলেন, পরিবারের সম্মান রক্ষার জন্য তিনি খুন করেছেন। প্রথমে তাঁকে আজীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও পরে আপিলের মাধ্যমে তিনি মুক্তি পেয়ে যান।