পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। ‘কেবলগেট’ বা সাইফার কেলেঙ্কারি হিসেবে পরিচিত এই ঘটনাকে তিনি পুরোপুরি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রতত্ত্ব বলে আখ্যা দিয়েছেন।
পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম দ্য ডনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের শুনানিতে অংশ নিয়ে ডোনাল্ড লু এই দাবি করেন। কংগ্রেসের পররাষ্ট্রনীতিবিষয়ক উপকমিটির সামনে ‘নির্বাচন-পরবর্তী পাকিস্তান: পাকিস্তানে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ ও যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তান সম্পর্কের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা’—শীর্ষক এক শুনানিতে তিনি এই দাবি করেন।
ডোনাল্ড লু ২০২২ সালের শুরুর দিকে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত আসাদ মজিদকে ইমরান খানের ক্ষমতাচ্যুতির ব্যাপারে সতর্ক করেছিলেন। পরে বিষয়টি একটি তারবার্তায় (সাইফার) আসাদ মজীদ বিষয়টি ইসলামাবাদে ইমরান খানের সরকারে অবহিত করেন। পরে সেই তারবার্তা সূত্র ধরে ইমরান খান দাবি করেন, ২০২২ সালে তাঁর সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। এ বিষয়ে ইমরান খানের বিরুদ্ধে একটি মামলাও আছে।
পরে বিষয়টি ফাঁস হয়ে গেলে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে পাকিস্তান ও মার্কিন সাংবাদিকেরা বিস্তারিত জানতে চান। কিন্তু এ বিষয়ে বিস্তারিত কোনো তথ্য না দিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বারবার বিষয়টিকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে।
শুনানিতে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘প্রথমে আমি এ বিষয়ে খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, এই অভিযোগ, এই ষড়যন্ত্রতত্ত্ব মিথ্যা। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। পাকিস্তানে যেটিকে সাইফার বলা হয়, আমি সে সম্পর্কিত সংবাদ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করেছি। এখানকার (ওয়াশিংটনে পাকিস্তানের) দূতাবাস থেকে কথিত কূটনৈতিক তারবার্তাটি ফাঁস হয়েছে।’
ডোনাল্ড লু আরও বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, এটি যথাযথ নয়। এখানে এমন কোনো পয়েন্ট নেই, যা যুক্তরাষ্ট্র বা আমাকে ব্যক্তিগতভাবে অভিযুক্ত করে যে আমি ইমরান খানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছি। তৃতীয়ত, বৈঠকে উপস্থিত অপর ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত তৎকালীন পাকিস্তানি রাষ্ট্রদূত নিজেও তাঁর দেশের সরকারের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, এখানে কোনো ষড়যন্ত্র হয়নি।’
এ সময় শুনানিতে উপস্থিত এক ব্যক্তি ডোনাল্ড লুকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠেন, তিনি একজন ‘মিথ্যাবাদী’ এবং এ সময় তিনি ইমরান খানের মুক্তি দাবি করেন। এমনকি ‘ইমরান খানের মুক্তি চাই’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন।
লু বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সার্বভৌমত্ব ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাকিস্তানিদের নিজস্ব নেতা বেছে নেওয়াকে সম্মান করে। তিনি আরও বলেন, তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তার কারণে গত দুই বছরে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে নিয়মিত প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
শুনানিতে ডোনাল্ড লুর কাছে এক মার্কিন আইনপ্রণেতা জানতে চান, ইমরান খান রাশিয়া সফরের পর তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো চেষ্টা মার্কিন প্রশাসন করেছিল কি না। জবাবে ডোনাল্ড লু নেতিবাচক জবাব দেন। কিন্তু কাকতালীয়ভাবে ইমরান খানের রাশিয়া সফরের মাস দুই পরেই তাঁর সরকারের পতন হয়। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ডোনাল্ড লু বলেন, ‘আমি কোনোভাবেই এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলাম না, এমনকি আর কোনো মার্কিনিও যুক্ত ছিল না।’