যুক্তরাষ্ট্রের ভারতীয় বংশোদ্ভূত দম্পতি ও তাঁদের মেয়ের মৃত্যুর ঘটনায় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে, এটিকে হত্যার পর আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়েছে। গত ২৮ ডিসেম্বর ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যে প্রাসাদসম বাড়ি থেকে রাকেশ কামাল (৫৭), স্ত্রী টিনা (৫৪) ও তাঁদের মেয়ে আরিয়ানার (১৮) লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
রাকেশ কামালের মৃতদেহের পাশেই পড়ে ছিল একটি আগ্নেয়াস্ত্র। খবর এনডিটিভির।
গতকাল মঙ্গলবার ভার্জিনিয়ার নরফোক ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি (ডিএ) মাইকেল মরিসের দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, চিফ মেডিকেল এক্সামিনারের কার্যালয়ের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন অনুসারে, টিনা এবং তাঁর মেয়ে আরিয়ানাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
রাকেশের শরীরের জখম আত্মঘাতী আঘাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন তিনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই চূড়ান্ত ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়ে যাবে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, বন্দুকটির ফরেনসিক ও ব্যালিস্টিক পরীক্ষার চূড়ান্ত প্রতিবেদন এখনো আসেনি। রাকেশের কাছে পাওয়া আগ্নেয়াস্ত্রটি দশমিক ৪০ ক্যালিবার গ্লক ২২-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
তবে আগ্নেয়াস্ত্রটি রাকেশের নামে নিবন্ধিত ছিল না। তিনি আগ্নেয়াস্ত্র রাখার লাইসেন্স পাননি বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আগ্নেয়াস্ত্রটির উৎস নিশ্চিত হতে ম্যাসাচুসেটসের পুলিশ অ্যালকোহল, তামাক, আগ্নেয়াস্ত্র ও বিস্ফোরক ব্যুরোর সহযোগিতা নিচ্ছে। এ ঘটনাটি ডোভার ও ম্যাসাচুসেটসের পুলিশের অধীনে তদন্ত করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে মরিসে সাংবাদিকদের বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে, কোনো মারাত্মক পারিবারিক সহিংসতার জেরে এবং বাইরের কোনো সংশ্লিষ্টতা ছাড়াই এ ঘটনা ঘটেছে।
গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ২৪ মিনিটে কামালের এক আত্মীয় ডোভার পুলিশকে ফোন করেন। বেশ কয়েক দিন ধরে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে না পারায় তাঁরা রাকেশের বাড়িতে খোঁজ নিতে যান।
ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুলিশ বাড়ির ভেতর থেকে রাকেশ, টিনা ও আরিয়ানার লাশ উদ্ধার করে। তদন্তকারীরা অনেক রাত পর্যন্ত ঘটনাস্থলে কাজ করেন। ম্যাসাচুসেটসের রাজধানী বোস্টন থেকে ৩২ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে ডোভার শহর অবস্থিত।
মরিসে বলেন, এর আগে ওই বাড়ি নিয়ে কোনো ধরনের পুলিশি প্রতিবেদন বা পারিবারিক সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি।
দ্য নিউইয়র্ক পোস্টের প্রতিবেদন অনুসারে, পরিবারটির সুবিশাল প্রাসাদটির মূল্য আনুমানিক ৫৪ লাখ ৫০ হাজার ডলার। প্রায় এক বছর আগে বাড়িটি নিলামে ওঠে এবং ৩০ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ২০১৯ সালে রাকেশ ডোভারে ৪০ লাখ ডলার মূল্যের ১৯ হাজার বর্গফুটের ১১টি বেডরুম বিশিষ্ট বাড়িটি কেনেন।
পুলিশ বলছে, ওই সময় বাড়িতে শুধু পরিবারের এ তিন সদস্যই থাকতেন। ডোভার এলাকাটি ম্যাসাচুসেটসের সবচেয়ে ধনী এবং নিরাপদ এলাকার মধ্যে একটি।
টিনা ও তাঁর স্বামী আগে এডুনোভা নামের একটি শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করতেন। প্রতিষ্ঠানটি এখন বিলুপ্ত। অনলাইন রেকর্ড অনুসারে, সম্প্রতি কয়েক বছর ধরে পরিবারটি আর্থিক সমস্যায় ভুগছিল। ২০১৬ সালে তাঁদের কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এবং ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
এডুনোভার ওয়েবসাইটে টিনাকে কোম্পানিটির চিফ অপারেটিং অফিসার হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া তিনি হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এডুনোভার ওয়েবসাইটে উল্লিখিত জীবনবৃত্তান্ত অনুসারে, বোস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রাকেশ কামাল এমআইটি স্লোন স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করেছেন।
এডুনোভাতে কাজ করার আগে তিনি শিক্ষাবিষয়ক পরামর্শক হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জীবনীতে উল্লেখ করা হয়।
বোস্টন গ্লোব সংবাদপত্রের প্রতিবেদন অনুসারে, এডুনোভা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, উচ্চবিদ্যালয় এবং কলেজ শিক্ষার্থীদের গ্রেড উন্নয়নে শিক্ষাসহায়ক প্ল্যাটফর্ম।
টিনা কামাল ২০২২ সালে ১০ লাখ ডলার থেকে ১ কোটি ডলার দেনা দেখিয়ে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণা করেন। তবে যথার্থ প্রমাণের অভাবে এ মামলাটি খারিজ হয়ে যায়। তিনি ম্যাসাচুসেটসের আমেরিকান রেডক্রসের পরিচালনা পর্ষদের একজন হিসেবে তালিকাভুক্ত ছিলেন।
টিনার অনলাইন জীবনী অনুসারে, তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তি শিল্পে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কর্মরত ছিলেন।
দম্পতিটির মেয়ে ১৮ বছর বয়সী আরিয়ানা মিডলবারি কলেজে নিউরোসায়েন্স বিষয়ে পড়াশোনা করছিলেন। এটি ভারমন্টের একটি বেসরকারি কলেজ, সেখানে বছরে ৬৪ হাজার ৮০০ ডলার খরচ হয়।
পুলিশের মতে, ২০২০ সাল থেকেই ডোভারে কোনো হত্যার ঘটনা ঘটেনি। এ ঘটনাটি বেশ মর্মান্তিক। মরিস সাংবাদিকদের বলেন, ‘নরফোক কাউন্টিতে বিশেষ করে ডোভারে এ ধরনের সহিংসতার ঘটনা খুবই বিরল।’