অনলাইন ডেস্ক
লাতিন আমেরিকার দেশ ব্রাজিলের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য রিও গ্রান্ডে ডো সুলে চলতি সপ্তাহে প্রবল বৃষ্টিতে কমপক্ষে ৫৬ জন মারা গেছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় মৃতের সংখ্যার সঙ্গে আরও জানিয়েছে, এখনো কয়েক ডজন মানুষের খোঁজ পাওয়া যায়নি। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে খবরটি দিয়েছে।
রিও গ্রান্ডে ডো সুলের সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ৭৪ জন এখনো নিখোঁজ এবং ৬৯ হাজারেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত কয়েক দিনের ঝড়ে রাজ্যটির ৪৯৭টি শহরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উরুগুয়ে ও আর্জেন্টিনার সীমান্তবর্তী রাজ্য রিও গ্রান্ডে ডো সুলের বেশ কয়েকটি এলাকায় রাস্তা ও সেতু ধ্বংস হয়েছে।
রাজ্যটিতে বিদ্যুৎ এবং বিশুদ্ধ পানি ছাড়া আছেন কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ। এমনকি ব্রাজিলের এই অঞ্চলে আরও বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ঝড়ের কারণে বেন্টো গনসালভেস শহরের কাছে ভূমিধস এবং একটি জলবিদ্যুৎ বাঁধ ভেঙে যায়, যাতে ৩০ জন নিহত হয়। এ ছাড়া পানির স্তর বৃদ্ধির কারণে এলাকার দ্বিতীয় বাঁধও ভেঙে পড়ার ঝুঁকিতে রয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রিও গ্রান্ডে ডো সুলের রাজধানী পোর্তো আলেগ্রেতে গুয়াইবা হ্রদের পাড় ভেঙে বন্যার পানি রাস্তায় এসেছে। আশপাশের কিছু এলাকাও তলিয়ে গেছে। পোর্তো আলেগ্রের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অনির্দিষ্টকালের জন্য সব ফ্লাইট স্থগিত করেছে।
বন্যার প্রকোপে কিছু কিছু শহরে পানির স্তর অনেক ওপরে উঠে গেছে, তা বিগত দেড় শ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বলে জানিয়েছে ব্রাজিলের জিওলজিক্যাল সার্ভে।
রাজ্যটির গভর্নর এডুয়ার্ডো লেইট গতকাল সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ঝড় এবং এর পরিণতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রিও গ্রান্ডে ডো সুলের একটি মার্শাল প্ল্যান প্রয়োজন।
ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভা গত বৃহস্পতিবার রিও গ্রান্ডে ডো সুল পরিদর্শন করেছিলেন। উদ্ধার তৎপরতা তদারক করতে আজ রোববার রাজ্যটিতে তাঁর আবারও যাওয়ার কথা রয়েছে। সামাজিক প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে লুলা বলেন, রাজ্যটির সঙ্গে সরকারের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রয়েছে এবং রাজ্যটির যা কিছু প্রয়োজন তা দিয়েই তাদের সহায়তা করা হবে।
ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে রিও গ্রান্দে ডো সুল প্রায়ই চরম আবহাওয়ার মুখে পড়ে। কখনো কখনো সেখানে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। কখনো আবার দেখা দেয় খরা। স্থানীয় বিজ্ঞানীদের ধারণা, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সেখানকার আবহাওয়া আরও চরম রূপ নিচ্ছে।
ব্রাজিলে এ ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই প্রথম নয়। চলতি বছরের বিগত চার মাসে অন্তত চার দফা বন্যা হয়েছে। এর আগে, গত বছরের জুলাই, সেপ্টেম্বর ও নভেম্বর মাসের বন্যায় অন্তত ৭৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।