হোম > বিশ্ব > যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা

যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় ট্রাম্প যুগের সূচনার আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা

অনলাইন ডেস্ক

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্র তো বটেই, সারা বিশ্বের মানুষ নজর রেখেছেন ওয়াশিংটন ডিসিতে। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। ট্রাম্পের এই দ্বিতীয় মেয়াদ নানা কারণেই আলোচনায়। কারণ, তিনি এবং তাঁর দল এমন এমন সব সিদ্ধান্ত গ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বিশ্বের রাজনীতি, অর্থনীতি এবং ভূরাজনীতির খেলা বদলে দিতে পারে।

আজ সোমবার ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন। দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি নির্বাহী ক্ষমতার সীমা প্রসারিত করা, লাখ লাখ অভিবাসীকে দেশে ফেরত পাঠানো, রাজনৈতিক শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

ট্রাম্পের এই শপথ গ্রহণ তাঁর জন্য এক বিশাল প্রত্যাবর্তন। কারণ, তিনি দুটি অভিশংসন বিচার প্রক্রিয়া, একটি ফৌজদারি মামলার রায়, দুটি হত্যাচেষ্টা এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ অতিক্রম করে এসেছেন তিনি।

ট্রাম্পের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান মার্কিন কংগ্রেস ভবনের রোটুন্ডা কক্ষে যুক্তরাষ্ট্র স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠিত হবে। বিগত ৪০ বছরের মধ্যে এই প্রথম মার্কিন কংগ্রেসের এই কক্ষে প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। মূলত, বাইরে চরম শীতল আবহাওয়া বিরাজ করায় এই সিদ্ধান্ত। মজার ব্যাপার হলো, ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প যখন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের কাছে হেরে যান তখন ট্রাম্পের রিপাবলিকান সমর্থকেরা কংগ্রেস ভবনে হামলা চালিয়েছিল।

গ্রোভার ক্লিভল্যান্ডের পর বিগত ১২০ বছরের মধ্যে এই প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট পরাজয়ের পর দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফিরছেন। ট্রাম্প এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি ক্যাপিটল ভবনে হামলার ঘটনায় অভিযুক্ত দেড় হাজারজনেরও বেশি লোককে তিনি প্রথম দিনেই ক্ষমা করবেন নির্বাহী আদেশে।

অভিষেকের দিন থেকেই তিনি নির্বাহী আদেশে অভিবাসন, জ্বালানি এবং শুল্কের মতো বিষয় নিয়ে পদক্ষেপ নেবেন। গতকাল রোববার ওয়াশিংটনে এক প্রচারণা সভায় তিনি কঠোর অভিবাসন নীতির ঘোষণা দেন।

এই সাবেক প্রেসিডেন্ট এবার বর্তমান ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসকে ২০ লাখের বেশি ভোটে পরাজিত করে ক্ষমতায় ফিরছেন। যদিও তিনি ৫০ শতাংশ পপুলার ভোট অর্জন করতে পারেননি। তবে ২০১৬ সালে তিনি ইলেকটোরাল কলেজে জয়লাভ করলেও হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে প্রায় ৩০ লাখ কম ভোট পেয়েছিলেন।

টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট–বিষয়ক ইতিহাসবিদ জেরেমি সুরি এই সময়কে ১৯ শতকের শেষ সময়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তখন গ্রোভার ক্লিভল্যান্ড একমাত্র প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরপর নয়, বরং ভিন্ন দুটি মেয়াদে ক্ষমতায় এসেছিলেন। সুরি বলেন, তখনো শিল্পবিপ্লব অর্থনীতিকে পরিবর্তন করেছিল, সম্পদবৈষম্য বেড়েছিল এবং অভিবাসীদের সংখ্যা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছিল।

ট্রাম্প এবার এমন একটি কংগ্রেস নিয়ে শপথ নেবেন, যেখানে তাঁর দল রিপাবলিকানদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে এবং দলীয় ভিন্নমতের কোনো প্রতিনিধি নেই। তাঁর উপদেষ্টারা বলেছেন, তিনি নিরপেক্ষ আমলাদের বদলে বিশ্বস্ত অনুগামীদের নিয়োগ করবেন।

ক্ষমতা গ্রহণের আগেই ট্রাম্প একটি বিকল্প ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তুলেছেন। নির্বাচনের পরপরই তিনি বিশ্বনেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং পানামা খাল দখল, ন্যাটো মিত্র ডেনমার্কের গ্রিনল্যান্ড অঞ্চল গ্রহণ এবং বড় বাণিজ্য অংশীদারদের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলেছেন।

তার প্রভাব ইতিমধ্যে ইসরায়েল-হামাস চুক্তির ওপর পড়েছে। গত সপ্তাহে কাতারে হওয়া আলোচনায় ট্রাম্পের বিশেষ দূত অংশ নিয়েছিলেন। ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দেন যে শপথ গ্রহণের আগে হামাস তাদের জিম্মিদের মুক্তি না দিলে ভয়ানক পরিণতি হবে। নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তিনি প্রথম দিনেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করবেন। তবে তাঁর উপদেষ্টারা স্বীকার করেছেন, শান্তি চুক্তি করতে কয়েক মাস লেগে যাবে।

ট্রাম্প ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম প্রশাসনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিলেও, এবার অভিজ্ঞতার চেয়ে আনুগত্যকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন। তিনি বিভিন্ন বিতর্কিত ব্যক্তিকে মন্ত্রিসভার জন্য মনোনীত করেছেন, যাঁদের কেউ কেউ আবার দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাগুলোর কঠোর সমালোচক।

বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি ইলন মাস্ক এই নির্বাচনে ট্রাম্পকে জিতিয়ে আনতে ২৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি খরচ করেছেন। আমাজনের জেফ বেজোস, মেটার মার্ক জাকারবার্গ, অ্যালফাবেটের সুন্দর পিচাই এবং অ্যাপলের টিম কুকের মতো ধনকুবের প্রযুক্তি নেতারা ট্রাম্পের নতুন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছেন। তাঁরা আজকের অভিষেক অনুষ্ঠানে মাস্কের সঙ্গে যোগ দেবেন বলে রয়টার্সসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে। গতকাল ট্রাম্প জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনি ক্যালিফোর্নিয়ায় যাবেন এবং আগুনে বিধ্বস্ত লস অ্যাঞ্জেলেস কাউন্টি পরিদর্শন করবেন।

ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠান কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রচারণার সময় রাজনৈতিক সহিংসতার প্রবণতা বেড়ে গিয়েছিল, যার মধ্যে দুবার ট্রাম্পকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এর একটি ঘটনায় গুলি তাঁর কানের পাশ দিয়ে ছুঁয়ে যায়। নতুন বছরের শুরুর দিকে নিউ অরলিয়ন্সে একটি হামলার পর থেকে ফেডারেল কর্তৃপক্ষও সতর্ক অবস্থানে।

আট বছর আগে ট্রাম্প অভিষেক ভাষণে অপরাধে ভরা শহর ও দুর্বল সীমান্তের ‘আমেরিকান কারনেজ’ বা আমেরিকার ধ্বংসযজ্ঞ বন্ধের অঙ্গীকার করেছিলেন। এটি বেশির ভাগ নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ইতিবাচক বক্তব্যের ধারা থেকে একেবারেই ভিন্ন ছিল। ট্রাম্পের বক্তব্যে এবার কী সুর থাকে, তা পর্যালোচনা করবে বিভিন্ন বিদেশি সরকার। কারণ, তাঁর নির্বাচনী প্রচারণা ছিল প্ররোচনামূলক বক্তব্যে ভরা।

এদিকে, অভিষেকের পরপরই ওভাল অফিসে প্রথম দিনেই আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনের মধ্যেই ট্রাম্প প্রথম নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন। কিছু আদেশে মাদক চক্রগুলোকে ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এবং ইউএস-মেক্সিকো সীমান্তে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অভিবাসন নিয়ম কঠোর করার পরিকল্পনা রয়েছে। অন্য আদেশগুলো বাইডেন প্রশাসনের পরিবেশ–বিষয়ক নীতিমালা বাতিল এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের দিকে নিয়ে যেতে পারে পারে।

তবে অনেক নির্বাহী আদেশই আইনি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। একজন ‘অপরাধী’ হিসেবে হোয়াইট হাউসে প্রবেশ করা ট্রাম্পের ক্ষেত্রে এটি প্রথম ঘটনা। নিউইয়র্কের এক জুরি তাঁকে ব্যবসায়িক নথি জালিয়াতির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন। তিনি একজন পর্নো তারকাকে দেওয়া ঘুষ লুকাতে এটি করেছিলেন।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ফলে ট্রাম্প দুটি ফেডারেল অভিযোগ থেকে রেহাই পেয়েছেন। এর একটি ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল উল্টে দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং অন্যটি গোপন নথি রাখার অভিযোগ। কারণ, বিচার বিভাগের নীতি অনুযায়ী, দায়িত্বে থাকা প্রেসিডেন্টকে বিচার করা যায় না।

ট্রাম্পের পুত্র ব্যারন যেন আমেরিকার সবচেয়ে দীর্ঘকায় রহস্য

হোয়াইট হাউসে যেভাবে কাটছে বাইডেনের শেষ দিনটি

তিন ঘণ্টার নৈশভোজনের পর ট্রাম্পের প্রশংসায় পঞ্চমুখ বিল গেটস

যুক্তরাষ্ট্রের পতন ও তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ ঠেকানোর প্রতিশ্রুতি ট্রাম্পের

দায়িত্ব গ্রহণের পর চীন ও ভারত সফর করবেন ট্রাম্প

ট্রাম্পের নামে মিম কয়েন, এক লাফে দাম উঠল ৩২ ডলার

অভিষেকের আগে আবারও বিক্ষোভের মুখে ট্রাম্প

‘ডিপ স্টেট’ ভেঙে মার্কিন প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের জন্য যে পরিকল্পনা সাজালেন ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক বন্ধ ঘোষণা

যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বড় অভিযান শিগগির

সেকশন