ক্ষমতা গ্রহণের পরপরই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন মিমকয়েন ক্রিপ্টো জগতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। গতকাল শপথের দিন কয়েনটির বাজার মূলধন এক লাফে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর ক্রিপ্টোবান্ধব প্রশাসনের কারণে বিটকয়েনের দামও নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে।
বিষয়টি নিয়ে একদিকে যেমন উচ্ছ্বাস দেখা যাচ্ছে, অন্যদিকে তেমনি নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্নে উঠেছে নানা বিতর্ক।
ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রাইস ট্র্যাকার কয়েনগেকো জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাতে চালু হওয়া ট্রাম্পের মিমকয়েন ‘ট্রাম্প’-এর দাম শনিবার সকালেই ১০ ডলারে ছিল। এদিন কয়েনটির দাম সর্বোচ্চ ৭৪ দশমিক ৫৯ ডলারে পর্যন্ত ওঠে। তবে গতকাল কিছুটা মুনাফা হারিয়ে এটি ৩৩ দশমিক ৮৮ পয়সায় নেমে আসে।
ট্রাম্প-সংশ্লিষ্ট আরেকটি ক্রিপ্টো প্রকল্প ‘ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফিন্যান্সিয়াল’ গতকাল ঘোষণা করেছে, তারা প্রাথমিক টোকেন বিক্রিতে ৩০০ মিলিয়ন ডলার সংগ্রহ করেছে এবং অতিরিক্ত টোকেন ইস্যু করার পরিকল্পনা করছে।
ট্রাম্প প্রশাসন ক্রিপ্টোকারেন্সির জন্য ‘সুবর্ণ যুগ’ নিয়ে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। আগের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলে এই খাত কঠোর নিয়ন্ত্রণের আওতায় ছিল।
বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের দিন ১০৯ লাখ ৭১ ডলারে পৌঁছে রেকর্ড তৈরি করে। তবে পরে কিছুটা কমে ১০১ লাখ ৮৬৭ হাজার ৪০ পয়সায় লেনদেন চলতে থাকে।
কনোটোক্সিয়া লিমিটেডের বাজার বিশ্লেষক গ্রেজেগোর্জ দ্রোজডজ বলেন, ট্রাম্প ও মেলানিয়া নামে ক্রিপ্টোকারেন্সি চালুর ফলে ক্রিপ্টো বাজারের জনপ্রিয়তা বেড়েছে।
গত রোববার সোলানা ব্লকচেইনে ট্রাম্প ও মেলানিয়া ক্রিপ্টোকারেন্সি চালু হয়। এতে অল্ট কয়েন সোলানার দামও সপ্তাহান্তে বেড়ে ২৯৪ দশমিক ৩৩ ডলারে পৌঁছায়।
ক্রিপ্টো সম্পদ ব্যবস্থাপক অ্যাস্ট্রোনট ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাথিউ ডিব্ব বলেন, ‘অল্প সময়ের মধ্যে বাজারের এমন উল্লম্ফন “সেল দ্য নিউজ” হতে পারে। বিনিয়োগকারীরা ট্রাম্পের প্রথম দিনে কিছু নির্বাহী আদেশ কার্যকর হওয়ার প্রত্যাশা করছিল। তবে বিটকয়েনের দাম এরই মধ্যে কমেছে... আমরা এখানে আরও অস্থিরতার আশঙ্কা করছি। সম্ভবত আরও দরপতন হতে চলেছে।’
ট্রাম্পের নতুন ক্রিপ্টো মুদ্রার ৮০ শতাংশ মালিকানা তাঁর ব্যবসায়ী অংশীদার সিআইসি ডিজিটাল ও ফাইট, ফাইট, ফাইটের। সংস্থাটির ওয়েবসাইট অনুসারে, টোকেনগুলো ট্রাম্পের আদর্শ ও বিশ্বাসের প্রতি সমর্থনের প্রতীক। এগুলো কোনো বিনিয়োগ বা সিকিউরিটি নয়।
ট্রাম্পের ‘মিমকয়েন’ বাজারে আসা নিয়ে নৈতিকতা ও স্বচ্ছতার প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রির সম্পর্কের কারণে। হংকংভিত্তিক স্বাধীন ক্রিপ্টো বিশ্লেষক জাস্টিন ডি’এনেথান বলেন, ‘এই উদ্যোগকে ট্রাম্পের আরেকটি নিছক চমক বলে উড়িয়ে দেওয়া যেতেই পারে, তবে এটি নৈতিকতা এবং নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নের প্যান্ডোরা বাক্স খুলে দিয়েছে।’
ট্রাম্প অর্গানাইজেশন জানিয়েছে, হোয়াইট হাউসে যোগ দেওয়ার পর ট্রাম্প কয়েক বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা সন্তানদের কাছে হস্তান্তর করবেন। ফোর্বসের মতে, ট্রাম্পের সম্পদ আনুমানিক ৬ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, তবে এতে তার ক্রিপ্টো উদ্যোগগুলো অন্তর্ভুক্ত নয়।
ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্ভাব্য নীতি পরিবর্তনের আশায় সম্প্রতি বাজার চাঙ্গা হয়েছে। যদিও ট্রাম্প গতকাল কোনো নতুন নীতি ঘোষণা করেননি, অনেকেই তাৎক্ষণিক পরিবর্তনের আশা করেছিলেন।
অ্যাস্ট্রোনট ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা ম্যাথিউ ডিব বলেন, ‘বাজারে বিটকয়েনের জন্য কৌশলগত রিজার্ভ ও ডিজিটাল সম্পদের ওপর নিয়মকানুন শিথিল করার প্রত্যাশা রয়েছে। তবে এসব পরিবর্তন ধাপে ধাপে আসার সম্ভাবনা বেশি।’
নতুন কয়েনগুলোর মূল্যের দ্রুত উত্থান বিশেষজ্ঞদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। কনোটক্সিয়ার বিশ্লেষক গ্রেজেগরজ দ্রজদজ বলেন, ‘এ ধরনের মিম ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলো বড় অস্থিরতার শিকার হয় এবং সাধারণত এগুলোকে আমরা স্পেকুলেটিভ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করি।’
ডি’এনেথানের মতে, ট্রাম্পের এই ক্রিপ্টো টোকেন চালুর মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে ডিজিটাল সম্পদ ঢুকে পড়ল। যেটি এখন শাসন, লাভ ও প্রভাবের মধ্যে সীমানা অস্পষ্ট করছে।’