যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২০ জানুয়ারি শপথ নিতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অনেকে।
পলিটিকোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে বিদেশি কূটনীতিকদের সৌজন্যমূলক অংশগ্রহণ থাকে। সাধারণত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না। ট্রাম্প অবশ্য প্রচলিত রীতিনীতির ধার ধারেন না। তিনি তাঁর শপথ অনুষ্ঠানে অনেক বিদেশি নেতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তালিকায় ইউরোপের মধ্যমপন্থীদের বাদ দিয়ে অনেক কট্টর ডানপন্থী ও জাতীয়তাবাদী রাজনীতিবিদদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
শপথ অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নাম নেই আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায়।
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের তালিকায় ওপরের সারিতে রয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জেভিয়ার মিলেই। এর মধ্যে মিলেই এক মাস আগেই নিশ্চিত করেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। চলতি মাসের শুরুর দিকে মেলোনি ফ্লোরিডায় ট্রাম্পের মার-এ-লাগো রিসোর্টে যান। ট্রাম্প তাঁকে এক ‘দুর্দান্ত নারী’ বলে অভিহিত করেন। মেলোনির কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, সবকিছু ঠিক থাকলে মেলোনি অনুষ্ঠানে হাজির থাকবেন।
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের গুণমুগ্ধ হাঙ্গেরির প্রেসিডেন্ট ভিক্তর অরবানও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। তবে অরবানের কার্যালয় থেকে হাঙ্গেরির সংবাদমাধ্যমকে জানানো হয়েছে, তিনি ওই অনুষ্ঠানে থাকতে পারছেন না।
চীনের প্রেসিডেন্টকে গত মাসেই শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের হবু প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লেভিট গত মাসে ফক্স নিউজকে বলেছিলেন, এই অনুরোধ ‘সির সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনায় ট্রাম্পের আগ্রহ’-এর দিকেই ইঙ্গিত করছে। ওয়াশিংটনে বেইজিং দূতাবাস থেকে এখনো আমন্ত্রণপত্র পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি কিংবা সি সাড়া দিয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত করা হয়নি।
তবে বাস্তবতা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক অনুষ্ঠানে কোনো চীনা রাষ্ট্রপ্রধানের উপস্থিত হওয়ার নজির নেই। সি চিন পিং চাইলেও তাঁর উপস্থিত থাকার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কারণ, চীনের জ্যেষ্ঠ নেতাদের বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে দেশটি বেশ কঠোর নিয়মনীতি অনুসরণ করে। ভ্রমণ পরিকল্পনা চূড়ান্ত করতে কয়েক মাস লেগে যায়।
কিন্তু সি উপস্থিত না থাকলেও এই অনুষ্ঠানে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাঠানোর মধ্য দিয়ে তিনি নিশ্চিতভাবে ট্রাম্পের কাছে শুভেচ্ছাবার্তা পৌঁছে দিতে চান। গত সপ্তাহে সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, সির সম্ভাব্য প্রতিনিধির মধ্যে আছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর বলেছেন, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। তবে ট্রাম্পকে ‘বন্ধু’ সম্বোধনকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ পাননি। আজ শুক্রবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বিষয়টি এড়িয়ে যান।
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকেশি ইওয়াও নিশ্চিত করেছেন, ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা আছে তাঁর।
ট্রাম্পের ক্ষমতা গ্রহণ প্রক্রিয়ার দায়িত্বে থাকা দলের (ট্রানজিশন টিম) পক্ষ থেকে এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নায়িব বুকেলে ও ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট দানিয়েল নোবোয়াকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বুকেলে থাকবেন কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে ওয়াশিংটনে সংক্ষিপ্ত সফরকালে ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন নোবোয়া।
অনুষ্ঠানে ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ব্রাজিলে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান থাকার কারণে পাসপোর্ট বাতিল হওয়ায় তিনি উপস্থিত থাকতে পারছেন না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ও শীর্ষ ধনী ইলন মাস্কের পাশাপাশি শপথ অনুষ্ঠানে আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস এবং মেটার প্রধান মার্ক জাকারবার্গের মতো প্রযুক্তি খাতের স্বনামধন্য ব্যক্তিরা উপস্থিত থাকছেন।
প্রযুক্তি খাতের আরও যাঁরা থাকছেন
টিকটকের সিইও শৌ সি চিউ ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। সূত্রের বরাত দিয়ে টাইম জানিয়েছে, টিকটকের সিইওকে অন্য প্রযুক্তি নির্বাহীদের সঙ্গে একই ডায়াসে বসার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যদিও প্রথম মেয়াদে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে টিকটক ব্লক করার এবং একটি আমেরিকান কোম্পানির কাছে বিক্রি করতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছিলেন। ট্রাম্প এখন টিকটকের বড় সমর্থক। যদিও এটি ১৯ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রে নিষিদ্ধ হতে পারে।
অন্য যেসব বড় প্রযুক্তি কোম্পানির নির্বাহীরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে তাঁরা হলেন ওপেনএআইয়ের সিইও স্যাম অল্টম্যান, গুগলের সিইও সুন্দর পিচাই, অ্যাপলের সিইও টিম কুক এবং উবারের সিইও দারা খসরোশাহি।
অল্টম্যান, কুক, খসরোশাহিসহ কোম্পানিগুলো মেটা, আমাজন, গুগল এবং উবার সম্প্রতি ট্রাম্পের অভিষেক তহবিলে কমপক্ষে ১০ লাখ ডলার দিয়েছেন। এই প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো এবং এগুলোর নির্বাহীদের জন্য ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদ গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, তিনি এ খাতের করনীতি, বাণিজ্যনীতি এবং অ্যান্টিট্রাস্ট বাস্তবায়নে পরিবর্তন আনতে পারে।
থাকছেন আদর্শিক বন্ধুরা
ট্রাম্পের অভিষেকে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনা করা বিশ্বের অন্য আদর্শিক মিত্রদের মধ্যে রয়েছেন বেলজিয়ামের ভ্লামস বেলাং পার্টির চেয়ারম্যান টম ভ্যান গ্রিয়েকেন, ফ্রান্সের জাতীয়তাবাদী রিকনকেট পার্টির এরিক জেমুর, জার্মানির অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (আএফডি) পার্টির টিনো ক্রুপালা, স্পেনের ভক্স পার্টির প্রেসিডেন্ট সান্তিয়াগো আবাসকাল এবং পপুলিস্ট রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ।
ইন্টারনেট সেলিব্রিটি
ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানে কিছু সেলিব্রিটি এবং ইন্টারনেট ব্যক্তিত্বদের উপস্থিতি প্রত্যাশা করা হচ্ছে। টিএমজির তথ্য অনুযায়ী, তালিকায় আছেন জেক এবং লোগান পল, থিও ভন, ব্রাইস হল এবং নেল্ক বয়েজ। নির্বাচনী প্রচারণার সময় থিও ভন এবং নেল্ক বয়েজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন ট্রাম্প। পুরুষতান্ত্রিকতাবাদী পডকাস্টে এই সাক্ষাৎকার প্রচারিত হয়েছিল। এটি ছিল তরুণ পুরুষদের কাছে পৌঁছানোর এবং তথাকথিত ‘ব্রো’ ভোট সংগ্রহের কৌশল।
টিএমজির প্রতিবেদন অনুযায়ী, অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন আরও কিছু সেলিব্রিটি; যেমন কেটলিন জেনার, অ্যাম্বার রোজ, ডানা হোয়াইট এবং মেগিন কেলি। ক্যারি আন্ডারউড ‘আমেরিকা দ্য বিউটিফুল’ গানটি পরিবেশন করবেন।