অনলাইন ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় লস অ্যাঞ্জেলেসের সবচেয়ে বিলাসবহুল এলাকাগুলো এখন হুমকির মুখে। এই পরিস্থিতিতে ধনী বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপণ সেবাও নিচ্ছেন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই সেবা নিতে প্রতি ঘণ্টায় খরচ হচ্ছে প্রায় ২ হাজার ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা।
স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধনী বাসিন্দারা নিজেদের বিলাসবহুল সম্পত্তি রক্ষা করার জন্য এই ব্যক্তিগত সেবা নিচ্ছেন। একটি ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের মালিক ক্রিস ডান জানান, দাবানলের সংকট শুরু হওয়ার পর থেকে এই ধরনের সেবার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
সান ফ্রান্সিসকো ক্রনিকলের এক সাংবাদিক উল্লেখ করেছেন, ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপক দল একটি বাড়ির ছাদে পানি ছিটিয়ে পুরো রাত জেগে পাহারা দিয়েছে, যেন আগুনের নতুন স্ফুলিঙ্গ তৈরি না হয়। ওই সাংবাদিক এক্স মাধ্যমে লিখেছেন, ‘ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপকেরা এই হলিউড হিলসের বাড়ি সুরক্ষিত রাখছেন। তাঁরা দ্বিতীয় তলার কার্নিশ থেকে পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করেছেন। তাঁরা সারা রাত এখানে থাকবেন।’
জানা গেছে, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর দমকল কর্মীরা নির্দিষ্ট বাগানের ওপর ফায়ার রিটারডেন্ট ছিটানো বা গাছের চারপাশে আগুন প্রতিরোধক উপকরণ মোড়ানোর মতো সেবা দেন।
‘টরগারসনস ওয়াইল্ডফায়ার ডিফেন্স সিস্টেমস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান তাদের ক্রুদের পানি, ফায়ার রিটারডেন্ট জেল এবং নিজস্ব পানির ট্যাংক দিয়ে পাঠায়। এই প্রতিষ্ঠান বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করে, যারা তাদের গ্রাহকদের জন্য এই প্রিমিয়াম সেবা দেয়। কোম্পানিটির প্রতিষ্ঠাতা লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসকে বলেন, ‘যদি ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপকেরা একটি বাড়ি রক্ষা করতে পারেন, তবে এটি উভয় পক্ষের জন্যই লাভজনক। বাড়ির মালিক তাঁদের সম্পত্তি ধরে রাখতে পারেন এবং বিমা সংস্থাও বিশাল অর্থ গচ্চার হাত থেকে বেঁচে যায়।’
তবে এই ধনীরা এ ধরনের সেবা নেওয়ায় সমালোচনা হচ্ছে। কারণ, এটি সংকটকালে শ্রেণিবৈষম্য আরও বাড়িয়ে দেয়। সম্প্রতি মিলিয়নিয়ার কিথ ওয়াসারম্যান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাঁর সম্পত্তি রক্ষার জন্য প্রাইভেট অগ্নিনির্বাপক দল নিয়োগের চেষ্টা করায় তীব্র সমালোচনার শিকার হন। বিলিয়নিয়ার রিক কারুসোও একইভাবে সমালোচনার মুখে পড়েন, যখন জানা যায়, তিনি তাঁর সম্পত্তি রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপক দল ভাড়া করেছিলেন।
এর আগে ২০১৮ সালে কিম কারদাশিয়ান এবং কানিয়ে ওয়েস্ট তাঁদের বাড়ি দাবানল থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যক্তিগত অগ্নিনির্বাপক দলকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। সেই দাবানলে তাঁদের সান্তা মনিকা পর্বতের বাড়ি রক্ষা পেয়েছিল।
সর্বশেষ দাবানলে লস অ্যাঞ্জেলেসে এখন পর্যন্ত ২৪ জন মারা গেছেন। ১২ হাজারের বেশি স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১ লাখের বেশি মানুষ ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। এই দাবানলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৫ থেকে ১৫০ বিলিয়ন ডলার।