রাশিয়ার অন্তর্ঘাতমূলক কর্মকাণ্ড, মিথ্যা তথ্য প্রচার ও সাইবার হামলা প্রতিরোধে আন্তঃদেশীয় সমন্বিত কার্যক্রম স্থগিত করেছে একাধিক মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা। ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র যখন রাশিয়ার চাপ দিচ্ছে, তখন এ ধরনের পদক্ষেপের ফলাফল বিপরীত হবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক বিশেষ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
পশ্চিমা দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাশিয়া তীব্র ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত বলে গত বছর প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মার্কিন গোয়েন্দাদের সতর্ক করেন। তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা দলকে এ বিষয়ে নজরদারির জন্য টাস্কফোর্স গঠনের আদেশ দিয়েছিলেন তিনি।
এ উদ্যোগ সংশ্লিষ্ট সাত কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানান, এই পরিকল্পনার নেতৃত্বে আছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের (এনএসসি)। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র ঘিরে রুশ ষড়যন্ত্র বানচালে তৎপর থাকা ইউরোপীয় মিত্রদের সাতটি জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থাও এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত।
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার আগে বাইডেন প্রশাসন এই প্রচেষ্টার বিষয়ে ট্রাম্পের দলকে অবহিত করে রাশিয়ার ‘সমন্বিত যুদ্ধ কৌশল’ নজরদারির এই কাজ অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করেছিল বলে সাবেক মার্কিন কর্মকর্তারা জানান।
কিন্তু ২০ জানুয়ারি ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর এই উদ্যােগের বেশিরভাগ কাজ স্থবির হয়ে পড়ে বলে জানিয়েছেন ১১ জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তা। তাঁরা বলছেন, মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ (এনএসসি) ও ইউরোপীয় জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের মধ্যে নিয়মিত বৈঠকগুলো আর হচ্ছে না। এমনকি এফবিআই, স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ দেশীয় সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করাও বন্ধ রেখেছে এনএসসি।
তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর প্রশাসনকে রাশিয়ার নাশকতার তৎপরতা নজরদারি ও প্রতিরোধের সব কাজ স্থগিত করতে আদেশ দিয়েছেন কি না, বা সংস্থাগুলো এখনো বাড়তি কর্মী নিয়োগের কাজ করছে কি না, বা তাঁরা হোয়াইট হাউস থেকে স্বাধীনভাবে নিজস্ব নীতি অনুসরণ করছে কি না— সে বিষয়ে রয়টার্স কিছু জানতে পারেনি।
এই টাস্কফোর্সে জড়িত কিছু কর্মকর্তার মতে, গোয়েন্দা সতর্কবার্তা থাকার পরও ট্রাম্প প্রশাসন বিষয়টি থেকে অগ্রাধিকার কমিয়ে দিচ্ছে বলে তাঁরা উদ্বিগ্ন। কারণ ট্রাম্প প্রশাসন স্পষ্টতই যখন রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে, তখনই এই পরিবর্তন ধরা পড়ল।
মার্কিন নির্বাচনে রাশিয়াসহ বিদেশি বৈরী শক্তির হস্তক্ষেপ ঠেকানোর কার্যক্রম গতমাসে বন্ধ করে দিয়েছে এফবিআই। এই কাজে জড়িত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এমনকি মার্কিন বিচার বিভাগের যে দলটি রুশ ধনকুবেরদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছিল, সেটিকেও বিলুপ্ত করা হয়েছে।
কয়েকজন মার্কিন কর্মকর্তা জানান, এই কার্যক্রমে যুক্ত পেশাদার কর্মকর্তারা আবার কাজ শুরু করবে কিনা সে বিষয়ে হোয়াইট হাউস কোনো নির্দেশনা দেয়নি। এর বাইরে যুক্তরাষ্ট্র এখনও রাশিয়ার নাশকতার তৎপরতাসম্পর্কিত গোয়েন্দা তথ্য ইউরোপীয় মিত্রদের সঙ্গে বিনিময় করছে কি না— তাও জানা যায়নি। তবে যুক্তরাজ্যের কর্মকর্তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটিশ সরকারের মধ্যে নিয়মিত গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগি অব্যাহত আছে।
আন্তঃদেশীয় এই গোয়েন্দা কার্যক্রম স্থগিত হওয়া প্রসঙ্গে হোয়াইট হাউসের কাছে জানতে চাইলে এনএসসির মুখপাত্র ব্রায়ান হিউজ বলেন, তাঁরা ‘প্রাসঙ্গিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করছে এবং আমেরিকানদের বিরুদ্ধে হুমকি মূল্যায়ন ও প্রতিহত করছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্পষ্টভাবে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর কোনো আক্রমণ হলে উপযুক্ত উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।’
ন্যাটোর এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদের সঙ্গে এই বিষয়ে সমন্বয় করছে। তবে তিনি বিস্তারিত জানাননি। সিআইএ, এফবিআই ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদেশ ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক মুখপাত্র অ্যানিটা হিপার বলেন, গোয়েন্দা তথ্য বিনিময়ের বৈঠক স্থগিত হওয়া নিয়ে নির্দিষ্ট তথ্য তার কাছে নেই। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ন্যাটোর সঙ্গে ‘হাইব্রিড হুমকি’ প্রতিরোধের কাজ সমন্বয় করছে। অবকাঠামোগত নাশকতা থেকে অপতথ্য ছড়ানোর তৎপরতা— সব কিছুই পড়ে এর মধ্যে।