সম্প্রতি মস্কোতে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন ও রুশ কর্মকর্তাদের একটি ইতিবাচক আলোচনা হয়। এই আলোচনার পরেই রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে মঙ্গলবার (স্থানীয় সময়) ফোনালাপের সময় নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই ফোনালাপে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, এয়ারফোর্স ওয়ানে ফ্লোরিডা থেকে ওয়াশিংটনে যাওয়ার পথে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখতে চাই, এই যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব কি না। হয়তো পারব, হয়তো পারব না, তবে যুদ্ধ বন্ধের ভালো সম্ভাবনা আছে।’
যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য এই ফোনালাপে ভূমি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়েও আলোচনা হবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তিনি ইউক্রেনের রুশ নিয়ন্ত্রিত জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে ইঙ্গিত করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, গত বৃহস্পতিবার রাতে মস্কোতে পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন মার্কিন দূত স্টিভ উইটকফ।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানান, পুতিন উইটকফের মাধ্যমে ট্রাম্পের কাছে একটি ‘সংকেত’ পৌঁছে দিতে এই বৈঠককে ব্যবহার করেছেন। তিনি আরও জানান, উইটকফ ট্রাম্পকে ব্রিফ করার পর রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে একটি ফোনালাপের সময় নির্ধারণ করবে। তবে ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ ভূমি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ট্রাম্পের বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী আলেক্সান্ডার গ্রুশকো বলেছেন, যেকোনো শান্তিচুক্তিতে রাশিয়া ‘আয়রনক্ল্যাড’ (অবিচল) নিরাপত্তা নিশ্চয়তা চাইবে। এর মধ্যে ইউক্রেনের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ন্যাটোতে যোগ না দেওয়ার অঙ্গীকার অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে।
রাশিয়া এর আগেও দাবি করেছে, ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদানের প্রচেষ্টা তাদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। এদিকে প্রেসিডেন্ট পুতিন চান, রাশিয়া দখল করা ভূখণ্ডগুলো ধরে রাখুক। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী সীমিত করা হোক এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হোক।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি যুদ্ধবিরতিতে আশাবাদী। তবে দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে কোনো আপস হবে না। তিনি বারবার বলেছেন, ‘রাশিয়াকে দখল করা অঞ্চল ছেড়ে দিতে হবে।’
এদিকে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার জানান, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী পাঠাতে প্রস্তুত। তবে রাশিয়া যুদ্ধ চলাকালে কোনো শান্তিরক্ষী মোতায়েনের বিরোধিতা করছে।
রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী গ্রুশকো বলেন, ‘যদি শান্তিরক্ষীরা সেখানে যায়, তবে তারা সংঘাতের অংশ হয়ে যাবে। আমরা নিরস্ত্র পর্যবেক্ষকদের কথা বলতে পারি, তবে এখন এসব শুধু কথার কথা।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও জানান, শান্তি আলোচনায় উভয় পক্ষকে কিছু ছাড় দিতে হবে। কিন্তু কোনো শর্ত এখনো চূড়ান্ত হয়নি। আশা করা যায়, মঙ্গলবার ট্রাম্প-পুতিনের ফোনালাপে যুদ্ধবিরতি আলোচনার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে।