মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ করেছেন তা কার্যকর হওয়ার সময় ঘনিয়ে আসছে। স্থানীয় সময় আগামী ৯ এপ্রিল রাত থেকে এই শুল্ক কার্যকর হবে। আর তার আগেই শুল্কের বিষয়টি সমাধান করতে ওয়াশিংটনে ট্রাম্প প্রশাসনের দেনদরবার শুরু করেছে তৈরি পোশাকশিল্পে বাংলাদেশের দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ভিয়েতনাম ও ভারত।
মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসন্ন সময়সীমার আগে নতুন শুল্ক আরোপ এড়াতে ভিয়েতনাম, ভারত ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা করছে। খোদ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে এই দেশগুলোর প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হচ্ছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনএন এ খবর জানিয়েছে।
আলোচনা যে চলছে, তার ইঙ্গিত মেলে ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা এক পোস্ট থেকে। নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করা এক পোস্টে তিনি বলেছেন, ভিয়েতনামের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক তো লাম প্রস্তাব দিয়েছেন যে, যদি উভয় পক্ষ পারস্পরিক সমঝোতায় পৌঁছাতে পারে, তাহলে শুল্ক শূন্যে নামিয়ে আনা হবে।
ট্রাম্প প্রশাসনের এক জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টার বরাত দিয়ে সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম, ভারত ও ইসরায়েলের মতো দেশগুলো বাণিজ্য আলোচনা দ্রুত করতে চাইছে। আসন্ন শুল্ক আরোপের সময়সীমার আগেই পৃথক চুক্তি চূড়ান্ত করার প্রচেষ্টায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ব্যক্তিগতভাবে যুক্ত আছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, এই আলোচনা সফল হলে তা দেশগুলোর জন্য ট্রাম্প প্রস্তাবিত শুল্ক আরোপ এড়ানোর একটি সম্ভাব্য পথ করে দিতে পারে।
এদিকে, হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে এক ব্রিফিংয়ে প্রাথমিকভাবে ২৬ শতাংশ শুল্কের কথা বলা হলেও, ট্রাম্প নতুন এক নির্বাহী আদেশে সব ভারতীয় পণ্যের ওপর ২৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। তবে, আদেশের সংযোজনীতে উচ্চতর হার উল্লেখ করা হয়েছিল, যা পরদিন সংশোধন করে আবার ২৬ শতাংশ করা হয়।
যদিও বেশির ভাগ রপ্তানিকারক ও ভারতীয় আমদানিকারকদের কাছে এই পার্থক্য সামান্য, তবে এই পরিবর্তন প্রক্রিয়াটির প্রতি তাদের মনোযোগ আকৃষ্ট হয়েছে। তবে কেবল ভারতই নয়, আরও কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা হয়েছে। পাল্টাপাল্টি শুল্কের আওতায় পড়া ৫৭টি দেশের মধ্যে আরও ১৭টি দেশের শুল্কহার সংশোধন করা হয়েছে। প্রত্যেক দেশের ক্ষেত্রে ১ শতাংশ পয়েন্ট বাড়ানো হয়েছে।
ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপের বিস্তৃত পদক্ষেপ বিভিন্ন দিক থেকে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—বাজারের দরপতন, বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর পাল্টা শুল্ক আরোপের হুমকি, মার্কিন সংস্থাগুলোর সমালোচনা এবং ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান ও গুরুত্বপূর্ণ আইনপ্রণেতাদের সংশয়।
চীন মার্কিন পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা ঘোষণার পর শুক্রবার টানা দ্বিতীয় দিনের মতো মার্কিন শেয়ারবাজারে দরপতন হয়েছে। এই পদক্ষেপ বিশ্ব অর্থনীতির প্রতিক্রিয়ার ওপর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিয়ন্ত্রণের সীমাবদ্ধতা স্পষ্ট করেছে। তাঁর প্রশাসন একটি ঝুঁকিপূর্ণ ও ঐতিহাসিক বাণিজ্য কৌশল পরিচালনার চেষ্টা করছে।