যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও চারটি নির্বাহী আদেশ দিয়েছেন। এর একটি হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আয়রন ডোম নির্মাণ, অপরটি হলো দেশটি থেকে ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ সম্পূর্ণরূপে দূর করা। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল সোমবার ট্রাম্প দক্ষিণ ফ্লোরিডায় তাঁর গলফ রিসোর্ট ট্রাম্প ন্যাশনাল ডোরাল মিয়ামিতে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। সেখানে তিনি প্রতিশ্রুতি দেন, যুক্তরাষ্ট্রের একটি নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ‘আয়রন ডোম’ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা কর্মসূচি নির্মাণের নির্দেশ দেবেন তিনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্প আরও বলেন, ‘আমাদের শক্তিশালী, আরও শক্তিশালী প্রতিরক্ষাব্যবস্থা থাকা প্রয়োজন। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি চারটি নতুন নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব।’ এ সময় তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘প্রথম আদেশটি হলো অত্যাধুনিক আয়রন ডোম মিসাইল প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণের কাজ অবিলম্বে শুরু করা, যা আমেরিকানদের সুরক্ষা দিতে সক্ষম হবে।’
ট্রাম্প আরও বলেন, অপর দুটি আদেশে একটির লক্ষ্য হবে বৈচিত্র্য, সমতা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগগুলো বাতিল করা এবং সামরিক বাহিনী থেকে ‘ট্রান্সজেন্ডার মতাদর্শ সম্পূর্ণভাবে দূর করা।’ চতুর্থ আদেশের মাধ্যমে তিনি কোভিড-১৯ মহামারির সময় বাধ্যতামূলক নিয়মাবলি মানতে অস্বীকৃতি জানানোয় বরখাস্ত প্রায় ৮ হাজার মার্কিন সেনাসদস্যকে পুনর্বহালের নির্দেশ দেবেন। এই সদস্যরা ২০২১ সালের আগস্ট থেকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বরখাস্ত হয়েছিলেন।
এর আগে, গত ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফিরেই নির্বাহী আদেশের বন্যা বইয়ে দেন ট্রাম্প। সেদিন তিনি ৪২টি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন। প্রথম দিকের আদেশগুলোর অনেকগুলোই অভিবাসন এবং সামাজিক ইস্যু নিয়ে ছিল। যেমন—তিনি জন্মসূত্রে মার্কিন নাগরিকত্বের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ নেন।
ট্রাম্পের সর্বশেষ নির্বাহী আদেশগুলো সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী গঠন এবং এর কৌশলগত অগ্রাধিকার নিয়ে। ট্রাম্প এর আগেও ২০১৭ সালে তাঁর প্রথম মেয়াদে ট্রান্সজেন্ডারদের সামরিক বাহিনীতে ভর্তি নিষিদ্ধ করে নির্বাহী আদেশ জারি করেন। পরে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালে তা বাতিল করেন। মার্কিন সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় ৮ হাজার ট্রান্সজেন্ডার সদস্য আছেন বলে অনুমান করা হয়।
ট্রাম্প তাঁর ২০২৪ সালের পুনর্নির্বাচনী প্রচারণায় আয়রন ডোম প্রতিরক্ষাব্যবস্থা নির্মাণের ইস্যুটি বারবার উত্থাপন করেছেন এবং ইসরায়েলের আয়রন ডোমের চেয়েও উন্নত ব্যবস্থা নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আগস্টে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম এক্সে সম্প্রচারিত এক পডকাস্টে তিনি বিলিয়নিয়ার ইলন মাস্ককে বলেছিলেন, ‘আমি বিশ্বের সেরা আয়রন ডোম নির্মাণ করতে চাই।’
এরপর, গত বছরের জুলাই মাসেও তিনি এই প্রস্তাব রিপাবলিকান পার্টির আনুষ্ঠানিক মঞ্চে উত্থাপন করেন। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা প্রয়োজনীয় বা কার্যকর কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
ইসরায়েলে ব্যবহৃত ব্যবস্থা কেবল তুলনামূলকভাবে নিম্ন ক্ষমতাসম্পন্ন রকেট ও মর্টারের বিরুদ্ধে কার্যকর এবং ইসরায়েলের আকার যুক্তরাষ্ট্রের একটি ছোট রাজ্য নিউ জার্সির সমান। বিশাল মার্কিন মূল ভূখণ্ডে অনুরূপ একটি ব্যবস্থা তৈরি অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সম্ভবত অকার্যকর হতে পারে, বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের মতো প্রতিপক্ষের উন্নত অস্ত্রশস্ত্রের মুখে।
পর্যবেক্ষকেরা আরও উল্লেখ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ইতিমধ্যে মিসাইল প্রতিরক্ষা কর্মসূচি যেমন গ্রাউন্ড-বেজড মিডকোর্স ডিফেন্স সিস্টেম এবং টার্মিনাল হাই অল্টিচুড এরিয়া ডিফেন্স (থাড) প্রোগ্রাম রয়েছে। ট্রাম্পের আয়রন ডোম প্রকল্পের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত, কারণ এটি প্রায় নিশ্চিতভাবেই কংগ্রেসের অর্থায়নের ওপর নির্ভর করবে।